শেয়ার বাজার

বীমাখাতের আস্থাহীনতা কাটাতে আসছে ‘করপোরেট গভর্ন্যান্স গাইডলাইন’

বীমাখাতের আস্থাহীনতা কাটাতে আসছে ‘করপোরেট গভর্ন্যান্স গাইডলাইন’
জাতীয় ব্যাংক-বিমা

দেশের বীমা প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম পরিচালনায় প্রযোজ্য আইন ও বিধি মেনে চলতে এবং সুশাসন নিশ্চিত করতে করপোরেট গভর্ন্যান্স গাইডলাইন করতে যাচ্ছে সরকার।

এর অংশ হিসেবে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) গত ১৯ সেপ্টেম্বর সংশ্লিষ্ট অংশীজন ও জনসাধারণের মতামতের জন্য গাইডলাইনটি তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে। আগামী রোববার পর্যন্ত মতামত দেওয়া যাবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

গাইডলাইনে বলা হয়েছে, জীবন ও সম্পত্তির ঝুঁকি মোকাবিলায় বীমা সেবার পরিধি বিস্তৃতির লক্ষ্যে বীমা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, পেশাদারত্ব ও আর্থিক শৃঙ্খলা বৃদ্ধির মাধ্যমে সুশাসন নিশ্চিত করা জরুরি।

এতে বলা হয়, করপোরেট গভর্ন্যান্স কাঠামোতে এমন একটি ব্যবস্থা থাকবে যা প্রশাসনিক দায়িত্ব ও তদারকির মধ্যে উপযুক্ত সীমারেখা, দায়িত্বের সুস্পষ্ট ও প্রকাশ্য নীতিমালা, দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের যোগ্যতা ও দক্ষতা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে শেয়ারহোল্ডার, স্টেকহোল্ডার ও বীমা গ্রাহকদের অধিকার সংরক্ষণ নিশ্চিত করে।

গাইডলাইনে আরও বলা হয়, প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের মোট পরিচালকের সংখ্যা হবে সর্বোচ্চ ২০ জন এবং এর মধ্যে ২ জন নিরপেক্ষ পরিচালক থাকবে। এ ছাড়া পরিচালক নিয়োগ এবং পুনর্নিয়োগের সুস্পষ্ট পদ্ধতি থাকবে।

আদালত দেউলিয়া ঘোষণা করেননি এবং বাংলাদেশ বা অন্য কোথাও কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণখেলাপি সাব্যস্ত হননি এমন ব্যক্তি বীমা কোম্পানির পরিচালক হতে পারবে।

এছাড়া কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হননি কিংবা কোনো জালিয়াতি, আর্থিক অপরাধ বা অন্য কোনো বেআইনি কার্যকলাপে জড়িত নন এমন ব্যক্তিও পরিচালক হতে পারবেন।

পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান কোম্পানির নন-এক্সিকিউটিভ পরিচালকদের মধ্য থেকে নির্বাচিত হবেন বলেও গাইডলাইনে উল্লেখ করা হয়েছে।

পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে, বাকি সদস্যরা পর্ষদ সভার জন্য চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতির কারণ কার্যবিবরণীতে যথাযথভাবে লিপিবদ্ধ করাসহ নন-এক্সিকিউটিভ পরিচালকদের মধ্য থেকে একজনকে চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচন করতে পারবেন।

প্রত্যেক পরিচালককে তার নিয়োগের ১৫ দিনের মধ্যে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কাছে বীমা কোম্পানিতে নিজের ও নিকট আত্মীয়ের শেয়ারধারণের বিস্তারিত তথ্য জমা দিতে হবে।

পরিচালক নিজে কিংবা পরিবারের কোনো সদস্য অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের পরিচালক বা জ্যেষ্ঠ নির্বাহী পদে অধিষ্ঠিত থাকলে তার বিস্তারিত তথ্য জমা দিতে হবে।

পরিচালনা পর্ষদের প্রধান দায়িত্ব হবে বীমা কোম্পানির দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য অর্জন এবং কার্যকর ও দক্ষ পরিচালনায় দিক-নির্দেশনা দেওয়া ও তদারকি করা। এ লক্ষ্য অর্জনে প্রয়োজনীয় নীতি ও করপোরেট গভর্ন্যান্স কাঠামো বা ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে পর্ষদকে।

গাইডলাইনে বলা হয়, পরিচালনা পর্ষদ মনোনয়ন ও পারিশ্রমিক কমিটির সুপারিশক্রমে পর্ষদের চেয়ারম্যান, সদস্য, প্রতিষ্ঠানের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য একটি আচরণ নীতিমালা প্রণয়ন করবে।

আচরণনীতিতে সুশাসন নিশ্চিতে ভূমিকা রাখে এমন বিষয়াদিসহ গোপনীয়তা, স্বার্থের দ্বন্দ্ব, আইন ও বিধি-বিধান পরিপালন, কর্মপরিবেশ, কর্মচারী, বীমাগ্রাহক এবং অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্কসহ বিভিন্ন বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

পরিচালনা পর্ষদের পক্ষে একটি বিনিয়োগ কমিটি ও উপকমিটি থাকবে যারা বীমা গ্রাহক, শেয়ারহোল্ডার এবং অংশীদারদের স্বার্থে কোম্পানির বিনিয়োগের সার্বিক বিষয় তদারকির করবে।

পরিচালনা পর্ষদের একটি উপকমিটি পর্ষদের প্রণীত কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে সম্ভাব্য ঝুঁকি হ্রাসে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে বলে গাইডলাইনে উল্লেখ করা হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়, বীমাকারীর উচিত একটি হুইসেল ব্লোয়িং নীতিমালা প্রণয়ন করা, যেন কর্মকর্তা-কর্মচারী, তাদের প্রতিনিধিত্বকারী সংস্থা, বাইরের অংশীজন, প্রতিষ্ঠানের ভেতরের অংশীজনদের অনভিপ্রেত আচরণ বা কার্যক্রমের বিষয়ে পর্ষদকে জানাতে পারে।