দেশের অর্থনীতির চাকা যেসব রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের মাধ্যমে গতিশীল হচ্ছে, তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন সোহাজ আহমেদ। সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের মোহাম্মদপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে তার জন্ম। তার পিতার নাম হাজী আবদুল নুর, পাঁচ ভাই এক বোনের মধ্যে সোহাজ আহমেদ সবার বড়।
পরিবারের বড় সন্তান হিসেবে পড়ালেখার পাশাপাশি ছাত্র জীবন থেকেই ছোটখাটো ব্যবসা করতেন। পরবর্তীতে কয়েকজন বন্ধুবান্ধব মিলে বাঙালি অধ্যুষিত লন্ডনের ব্যস্ততম এলাকায় শুরু করেন রেস্টুরেন্ট ব্যবসা । প্রায় এক দশক আগে বৃটেনের অর্থনীতিতে নেমে আসে মারাত্মক অর্থনৈতিক মন্দা, তখনই সোয়াজ আহমেদ উপলব্ধি করলেন অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা খুব একটা ভালো হবে না। তারপর তিনি ২০১৫ সালের দিকে গড়ে তোলেন সুপার স্টোর। ব্যবসায়িক সাফল্যের ধারাবাহিকতায় লন্ডনের বিভিন্ন স্থানে একাধিক আউটলেট উদ্বোধন করেন।
শুরুতে কিছুটা চ্যালেঞ্জ এর সম্মুখীন হলেও নিজের অক্লান্ত পরিশ্রম আর দক্ষতার মাধ্যমে নিজেকে এগিয়ে নিয়েছেন সফলতার দ্বারপ্রান্তে। মার্কিন সাময়িকী ফোর্বস প্রতিবছরই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সম্ভাবনাময় তরুণ সংগঠক, উদ্যোক্তা ও উদ্ভাবকের তালিকা প্রকাশ করে। সেখানে হয়তো এখনো সোহাজের নাম উঠেনি কিন্তু নিরবে যারা প্রবাসী উদ্যোক্তহয়ে দেশের নাম উজ্জ্বল করেছেন তাদের অন্যতম এই সোয়াজ আহমেদ। আলাপচারিতায় উঠে আসে প্রবাস জীবনের সংগ্রাম ও সাফল্যের কথা।
সম্প্রীতি তিনি বাংলাদেশে মুখোমুখি হন ক্যাশ ক্যাপিটেল নিউজ এর নির্বাহী সম্পাদক মিজানুর রহমান লিটনের সাথে।
জনাব সোয়াজ আহমেদ তরুণ উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন , যে কোনো পরিস্থিতির মোকাবিলায় আপনার ইতিবাচক মনোভাব অনেক বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে। বিশেষ করে আপনি যদি একজন উদ্যোক্তা হয়ে থাকেন নিঃসন্দেহে এ যাত্রায় আপনাকে অনেক ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে ছাত্রসুলভ মনোভাব, খোলা মন ও বহুমুখী মানসিকতা বজায় রাখতে হবে। যাত্রাপথে অসংখ্য ভুল ও ব্যর্থতা আসবে। কিন্তু অহংকার এড়িয়ে চলতে হবে এবং একই ভুলের পুনরাবৃত্তি যেন বারবার না হয়, সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।
বাংলাদেশী পণ্যের বহুমুখী রপ্তানি সম্ভাবনা প্রসঙ্গে সোয়াজ আহমেদ বলেন, বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের খাদ্যপণ্যের উপস্থিতি এবং এর সম্ভাবনাময় ‘আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশে উৎপাদিত খাদ্যপণ্যের উপস্থিতি বা বর্তমান মার্কেট খুব একটা আশাব্যঞ্জক নয় । সাধারণত বাংলাদেশি কোম্পানিগুলো প্রবাসী অধ্যুষিত দেশগুলোতেই বেশি রফতানি করে থাকে।’ ‘বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি মালিকানাধীন সুপার মার্কেটগুলোতেই দেশীয় পণ্যের বেশি উপস্থিতি দেখা যায়। সেই হিসাবে মূলধারার মার্কেট শেয়ার থেকে আমরা অনেক পিঁছিয়ে আছি।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্ববাজারে বাংলাদেশে উৎপাদিত খাদ্যপণ্য বাজারজাতকরণের একটি অপার সম্ভাবনা রয়েছে এবং এর মাধ্যমে বাংলাদেশের রফতানি আয় বৃদ্ধির যথেষ্ট সুযোগও রয়েছে। এজন্য বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগগুলোকে আরো তৎপর হতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে বৈদেশিক বাজারের ধরণ, তাদের খাদ্যাভ্যাস, প্রতিদ্বন্দ্বী রফতানিকারক দেশগুলোর বিক্রয় নীতি বা কর্মপন্থা সম্পর্কে ধারণা নিয়ে আমাদের রফতানি নীতি বা কর্মপন্থা তৈরি করতে হবে।
প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি বলেন যখনই দেশের অর্থনীতির সমৃদ্ধির কথা আসে, তখন একবাক্যে প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো রেমিট্যান্সের কথা আগে বলতে হবে। দেশের উন্নতি ও অগ্রগতির প্রধান সোপান রেমিট্যান্স। অর্থনীতিতে অক্সিজেনের মতো ভূমিকা রাখছে প্রবাসীরা। সেই প্রবাসীদের মাঝে কেউ কেউ অতি সাহসী হয়ে একসময় উদ্যোক্তা হয়ে ওঠেন যা দেশের জন্য অত্যন্ত গৌরবের ও অর্থনৈতিকভাবে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে।