পলিসি রিসার্স ইন্সটিটিউট (পিআরআই) এর নির্বাহী পরিচালক, ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ঘোষিত বাজেট বাস্তবতার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। রাজস্ব আহরণের যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে তা অর্জনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। কর ব্যবস্থাপনায় সুশাসনের অভাবে প্রত্যাশিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হয় না। বিগত ১১ অর্থ বছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড টার্গেটকৃত কর আহরণ করতে পারিনি।
শনিবার (০৩ জুন) তেজগাঁওস্থ এফডিসিতে প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণার প্রেক্ষাপটে মুক্তবাজার অর্থনীতিতে বাজার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ইউসিবি পাবলিক পার্লামেন্ট শিরোনামে এক বিতর্ক প্রতিযোগিতায় পলিসি রিসার্স ইন্সটিটিউট (পিআরআই) এর নির্বাহী পরিচালক, ড. আহসান এইচ মনসুর এসব কথা বলেন।
বিতর্ক প্রতিযোগিতায় সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। প্রতিযোগিতাটি আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি।
ড. আহসান এইচ মনসুর আরও বলেন, রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হলে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীসহ সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড ব্যহত হয়। দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতা এবারের বাজেটে প্রতিফলিত হয়নি। সরকারের টাকার ভয়ানক অভাব। বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা ছাপিয়ে অর্থসংকট মোকাবেলার চেষ্টা করলে মুদ্রাস্ফীতি বাড়বে। গত ১৫ বছরে ১ শতাংশ বিনিয়োগ বাড়েনি অথচ আগামী অর্থবছরে ৪ শতাংশ বিনিয়োগ বৃদ্ধির টার্গেট নেয়া হয়েছে যা বাস্তব সম্মত নয়। সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন বাড়ানো হলেও জনসেবার মান বাড়েনি বরং দুর্নীতি রেড়েছে। প্রশাসন নিজেরা নিজেদেরই সেবা দেয়। দেশে জনসেবার বদলে জনশাসন চলছে। ব্যাপক দুর্নীতির কারণে টাকা পাচার বাড়ছে। টাকা পাচার রোধে রাজনৈতিক অঙ্গীকার থাকতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে জনাব হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, এবারের বাজেটে বেকারত্ব দূরীকরণ, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, নব্য দরিদ্রদের জন্য সামাজিক সুরক্ষার, অনানুষ্ঠানিক খাতে শ্রমিকদের জীবিকা নিরাপত্তা, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশ, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, রেমিট্যান্স আহরণে প্রনোদনার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনার বিষয়েও সরকারের রাজনৈতিক অঙ্গীকারের কোন প্রতিফলন দেখা যায়নি এবারের বাজেটে বক্তৃতায়। প্রস্তাবিত বাজেটে রপ্তানীমুখী বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাতের জন্য সুনির্দিষ্ট কোন দিক নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। একদিকে স্মার্ট নাগরিক ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার কথা বলা হচ্ছে। অন্যদিকে বাজেটে অন্যতম অপরিহার্য শিক্ষা উপকরণ কলমের উপর করারোপ করা হয়েছে। যা আমাদের হতাশ করেছে। আমরা একদিকে পরিবেশবান্ধব যানবাহন ব্যবহারের গুরুত্ব দিচ্ছি। অন্যদিকে বাইসাইকেলের খুচরা যন্ত্রাংশের আমদানীর উপর করারোপ করে স্মার্ট ক্লাইমেটকে নিরুৎসাহিত করছি। প্রস্তাবিত বাজেটে প্রত্যেক ঞওঘ ধারীদের ন্যূনতম কর ২০০০ টাকা প্রদানের বিষয়টি পুনঃবিবেচনা করা উচিৎ। কারণ যার আয় করসীমার নিচে তাকে কর প্রদানে বাধ্য করা অযৌক্তিক।
তিনি আরো বলেন, বিশ্ব বাজারে জ্বালানীর দাম কমলেও জ্বালানীর অভাবে কোথাও কোথাও বিদ্যুৎ ঘাটতির কারণে ৮/১০ ঘন্টা লোড শেডিং দেখা যাচ্ছে। বাড়তি দামের চাপে সাধারণ মানুষ চ্যাপ্টা হলেও অসাধু ব্যবসায়ীচক্র দিনে দিনে আরো মোটাতাজা হচ্ছে। আয়কর ও ভ্যাট আহরণে ব্যাপক অনিয়ম চলছে। ভোক্তারা ভ্যাট প্রদান করলেও তা সরকারের কোষাগারে জমা হচ্ছে না। বড় বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো কর আহরণকারীদের দুর্বলতার কারণে সঠিক কর প্রদান করছে না। তাই বলা যায় মুক্তবাজার অর্থনীতির কোন সুফল আমরা পাচ্ছি না।
“মুক্তবাজার অর্থনীতিতে বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের ভূমিকা গৌণ” শীর্ষক ছায়া সংসদে প্রস্তাবের পক্ষে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া ও বিপক্ষে ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ঢাকা এর বিতার্কিকরা অংশগ্রহণ করে।
প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, ড. এস এম মোর্শেদ, সাংবাদিক মাঈনুল আলম, শারমীন রিনভী ও মুনিমা সুলতানা প্রমুখ। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী দলকে ট্রফি ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।