শুধু পড়ালেখার ক্ষেত্রেই নয়, পেশাগত জীবনের লক্ষ্য পূরণের জন্য সময়কে গুরুত্ব দিতে হবে সবার আগে। কেননা সময় কীভাবে ব্যয় করছেন তার ওপর সফল হওয়ার সম্ভাবনা নির্ভর করে। তবে এটি বলা যত সহজ, করা তত কঠিন। এজন্য কিছু কৌশল মেনে চলার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সময় ব্যবস্থাপনার প্রথম ও প্রধান শর্ত হলো সময়কে নিয়ন্ত্রণ। একজন শিক্ষার্থীকে পড়ালেখার পাশাপাশি খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, দক্ষতা উন্নয়নের মতো বিভিন্ন কার্যক্রমে পারদর্শী হতে উৎসাহিত করা হয়। এজন্য অগ্রাধিকার-ভিত্তিতে শিক্ষার্থীকে সে অনুযায়ী পরিকল্পনা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহারে উপকার পাওয়া যেতে পারে।
আত্মবিশ্বাস ও দক্ষতা বাড়াতে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। এতে কাজের চাপ কম মনে হবে। ফলে জটিল কাজও সহজ হয়ে যাবে, আত্মবিশ্বাস বাড়বে। এতে কর্মক্ষমতা, শেখার দক্ষতা ও আত্মপ্রেরণা উন্নত হবে।
শেষ মুহূর্তের জন্য কাজ ফেলে রাখা অনেকের অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেশিরভাগ শিক্ষার্থীকে পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় অ্যাসাইনমেন্ট করতে দেখা যায়। এতে ফলাফলও আশানুরূপ হয় না। এটি এমন এক অভ্যাস, চাইলেও পরিহার করা যায় না। তাই সময় ব্যবস্থাপনা আবশ্যক হয়ে পড়ে।
জেনে নিই কোন অ্যাপগুলো ব্যবহার করলে কিছুটা বাড়তি সুবিধা পাওয়া যাবে-
অ্যাপ্লয়ি
অ্যাপ্লয়ি একটি প্রজেক্ট ও টাস্ক-ভিত্তিক টাইম ট্র্যাকিং অ্যাপ। এতে রয়েছে ১০০টিরও বেশি ফিচার। অ্যাপটির মাধ্যমে ডিজিটাল ডিভাইসে সব কাজের সময়সীমা নির্ধারণ করে রাখা যায়। যেমন: কোনো প্রজেক্ট বা টাস্কের আওতাধীন কোর্স ও বিষয় আলাদা করে চিহ্নিত করা যাবে এবং কোনটির জন্য কতক্ষণ পড়ালেখা করতে হবে তা সেট করে রাখা যাবে। টাইম ট্র্যাকিংয়ের জন্য এতে রয়েছে পোমোডোরো টাইমার। যার মাধ্যমে ফোকাস ও ব্রেকের মাধ্যমে কাজ সম্পাদন করা সহজ হবে। এ ছাড়া, কোন সপ্তাহে কতটুকু সময় পড়ালেখা করেছেন তার বিস্তারিত টাইমশিটও দেখা যাবে।
ফরেস্ট
মনোযোগ ও কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে ফরেস্ট অ্যাপ। এর অনন্য ইন্টারফেস পরিশ্রমী মনোভাব বৃদ্ধি করে। প্রতিদিনের কাজ যথাসময়ে সম্পন্ন করতে অনুপ্রেরণাও পেতে পারেন অ্যাপটির মাধ্যমে। স্মার্টফোন থেকে দূরে থাকতে চাইলে এটি বেশ কাজে দেবে। ছোট ছোট উদ্ভিদ থেকে বিশালাকার বন সৃষ্টির ইন্টারফেস আপনার মনোযোগের ব্যাপ্তি কতটুকু তা প্রকাশ করবে।
ক্লিকআপ
একজন শিক্ষার্থীকে পড়ালেখা ও পরীক্ষা ছাড়াও অ্যাসাইনমেন্ট, প্রজেক্ট, প্রতিবেদন, গ্রুপ টাস্ক করতে হয়। ক্লিকআপ অ্যাপের মাধ্যমে একই ইন্টারফেসে সব কাজ করা যায়। একইসঙ্গে একাধিক প্রজেক্ট ও টাস্ক ওপেন করে সব অ্যাসাইনমেন্ট শ্রেণিবিভক্ত করে রাখা যাবে। নির্ধারিত তারিখ ও সময়সীমা সেট করা যাবে। এ ছাড়া, একটি ড্যাশবোর্ড সবসময় প্রজেক্টগুলোর আপডেট জানাবে। ডক ফাইলে টাস্ক পর্যালোচনা ও নোট লিখে রাখা যাবে। দলগত কাজের ক্ষেত্রে দলের সদস্যদের কাজ শেয়ার করা যাবে।
গুগল ক্যালেন্ডার
বেশিরভাগ শিক্ষার্থী কাগজ-কলমের মাধ্যমে শিডিউলিং, রিমাইন্ডার, টাস্ক বা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট করে। যা সময় অপচয় করে। এ ক্ষেত্রে ক্যালেন্ডার অ্যাপ ব্যবহার করলে সুবিধা পাওয়া যেতে পারে। যার মধ্যে গুগল ক্যালেন্ডারে সহজে ইভেন্ট প্ল্যানিং, ফোকাস ওয়ার্ক, টাস্ক ম্যানেজমেন্ট, অ্যাপয়েন্টমেন্ট শিডিউলিং ফিচার পাওয়া যাবে। এতে প্রতিদিনের কাজের রুটিন, যেমন: ক্লাস, গ্রুপের সময়সূচী সেট করা যেতে পারে।
রিক্লেইমএআই
গুগল ক্যালেন্ডার থেকে কিছুটা বাড়তি সুবিধা পাওয়া যাবে এই অ্যাপের মাধ্যমে। স্মার্ট টাস্ক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম আপনার গতানুগতিক ক্যালেন্ডারকে পুনরায় প্রাধান্য দেবে। কোনো আপডেট যাতে মিস না হয়ে যায় সেটিও খেয়াল রাখবে। এতে প্রতিদিনের রুটিন কাস্টমাইজ করা যাবে। অটো-কালার কোডিং ভিজ্যুয়ালাইজেশনে সাহায্য করবে। আপনি দৈনন্দিন রুটিন কতটুকু মেনে চলেছেন তাও জানান দেবে।
গুগল ড্রাইভ
স্টোরেজ ও ফাইল শেয়ারিংয়ের জন্য গুগল ড্রাইভ বেশ জনপ্রিয়। এতে বিনামূল্যে ১৫ জিবি পর্যন্ত স্টোরেজ পাওয়া যায় বিধায় একগাদা কাগজপত্র, নোটের ঝামেলা থেকে রেহাই মিলবে। এডুকেশন ইমেইল ব্যবহারে শিক্ষার্থীদের সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পরিষেবা দেওয়া হয়। ফাইল ও ফোল্ডার সংরক্ষণ করে অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করার সুবিধাও রয়েছে।
এভারনোট
নাম শুনলেই বোঝা যায় এটি নোট লেখার কাজে ব্যবহৃত হয়। একই জায়গায় সব পরিকল্পনা ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য টুকে রাখা যাবে এভারনোটে। যোগ করা যাবে ডকুমেন্ট, ছবি, রসিদের মতো জিনিসপাতি। ওয়েবপেজ ও গুগল ক্যালেন্ডারের সঙ্গেও সংযোগ রাখা যাবে। টাস্ক অনুযায়ী তারিখ নির্ধারণ করা যাবে সহজে। এর ইন্টারফেস দৈনন্দিন রুটিনে ভিন্নতা আনবে। একাধিক স্ক্র্যাচ প্যাড ও নোট উইজেটের সাহায্যে যেকোনো আপডেট দ্রুত পাওয়া যাবে।