বাংলাদেশে গত ১৩ বছরে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ছয়গুণের বেশি। ২০০৯ সালে বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের আকার প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা থাকলেও এখন সেটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা।
যদিও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের হিসাবে এই পরিমাণ প্রায় তিন লাখ কোটি টাকা। কারণ সন্দেহজনক ঋণ, আদালতের আদেশে খেলাপি স্থগিতাদেশ থাকা ঋণ, পুনঃতফসিল ও পুনর্গঠন করা ঋণকেও তারা খেলাপি দেখানোর পক্ষে।
বর্তমানে দেশের আদালতগুলোতেই খেলাপি ঋণের প্রায় পৌনে এক লাখ মামলা ঝুলে রয়েছে , যাতে এক লাখ ৬৬ হাজার কোটি টাকা আটকে রয়েছে।
ঋণ পেতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল যেসব শর্ত দিয়েছে, তার মধ্যে আছে খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধারে সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি গঠন, ঋণ খেলাপির সংজ্ঞায় পরিবর্তন, রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের খেলাপি ঋণ প্রায় ২১ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশে আনা ইত্যাদি।
ভিয়েতনাম, চীন, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো অনেক দেশ আইনের শক্ত প্রয়োগের মাধ্যমে খেলাপি ঋণ অনেক কমিয়ে এনেছে। বাংলাদেশ কেন সেটা পারছে না?
আইন থাকলেও প্রয়োগ নেই
বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদ, ব্যাংকিং খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এবং আইনজীবীরা বলছেন, খেলাপি ঋণ আদায়ে বাংলাদেশে কিছু আইন থাকলেও এসব প্রয়োগের অভাব রয়েছে। অন্যদিকে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে ব্যাংকিং খাতেও খেলাপিদের বিরুদ্ধে কখনোই খুব কঠোর ব্যবস্থা তো নেয়া হয়নি, বরং তারা বরাবর নানা রকমের সুবিধা পেয়েছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘’যারা বড় বড় অংকের ঋণ খেলাপি হয়েছেন, তাদের কখনো শাস্তি হয়েছে বলে আমি শুনিনি। যেসব ব্যাংক এর সাথে জড়িত থাকে, তাদের বিরুদ্ধেও বাংলাদেশ ব্যাংককে খুব কড়া ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না। ফলে খেলাপি ঋণ নিয়ে কারও মধ্যে কোন ভয় থাকে না।‘’
ব্যাংকিং খাতের কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশে বহুবার খেলাপি ঋণের সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিভিন্ন সময় খেলাপি ঋণ গ্রহীতাদের নানারকম ছাড় দেয়া হয়েছে। আইন সংশোধন করে একাধিকবার ঋণ পুনঃতফসিল এবং পুনর্গঠনের মতো সুবিধা দেয়া হয়েছে ।
সর্বশেষ ২০১৯ সালে ঋণের দুই শতাংশ কিস্তি দিয়ে খেলাপি ঋণ নিয়মিত রাখার সুযোগ করে দেয়া হয়। সেই নিয়মে ঋণ পরিশোধের জন্য ১০ বছর সময় দেয়া হয়, যার প্রথম বছরে কোন কিস্তি দিতে হবে না। কিন্তু খেলাপি ঋণ কমার বদলে আরও বেড়েছে।
খেলাপি ঋণ ঠেকাতে ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংককেও কখনো খুব কঠোর অবস্থান নিতে দেখা যায়নি।
এরকম অনিয়মে ঋণ বিতরণের সীমা টেনে দেয়া, নতুন শাখা খোলা বন্ধ, পরিচালনা পর্যদ ভেঙ্গে দেয়া বা পরিচালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার মতো ক্ষমতা রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। কিন্তু ঋণ নিয়ে বড় বড় অনিয়মের পরেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কেন্দ্রীয় ব্যাংককে একপ্রকার নীরব থাকতে দেখা যায়।
সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলছেন, ‘’সমস্যাটা হলো কিছু ভুল নীতি এবং সেটা ঠিক না করেই ব্যবস্থা নেয়া। এটা আসলে লিগ্যাসি প্রবলেম- আপনি কিছুদিন পরপর ঋণ খেলাপিদের ছাড় দিচ্ছেন। এটা আসলে তাদের একটা ব্যাড সিগন্যাল দিচ্ছে। পৃথিবীর কোন দেশে এভাবে দিনের পর দিন ঋণ খেলাপিদের ছাড় দেয় না।‘’
‘’সেন্ট্রাল ব্যাংক কি তাদের টার্গেট বেধে দিয়েছে যে এতদিনের মধ্যে তোমাদের খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে হবে? সেটা তো করছে না। তাদের হাতে কিছু ক্ষমতা দেয়া আছে, কিন্তু সেটা তো তারা প্রয়োগ করছে না। কোন ব্যাংক যদি খেলাপি ঋণ দিয়ে থাকে বা খেলাপি ঋণ দিচ্ছে, তাদের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংককে কড়া নজরদারি বা ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না,‘’ তিনি বলছেন।
এর কারণ হিসাবে রাজনৈতিক সদিচ্ছাকে তিনি দায়ী করছেন। কারণ বড় বড় ঋণ গ্রহীতাদের প্রায় সবার সঙ্গে রাজনৈতিক মহলের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ থাকে। ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোও এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চায় না। এমনকি অনেক সময় ঋণ খেলাপিদের সুবিধা দিতে ব্যাংকিং আইন সংশোধন করে ছাড় দেয়ার উদাহরণও রয়েছে।
দেশের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমেও নানা সময়ে নামে-বেনামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বেসরকারি কিছু ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে তা পাচারের অভিযোগ উঠেছে।
ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনাদায়ী ঋণের একটি বড় কারণ হচ্ছে পর্যাপ্ত যাচাই-বাছাই না করেই নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠানকে বড় আকারে ঋণ অনুমোদন দেয়া।
অন্যান্য দেশে কী ব্যবস্থা?
বিশ্বের অনেক দেশে ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার মাধ্যমে সংকটময় পরিস্থিতি থেকেও ব্যাংকিং খাতকে তুলে আনা হয়েছে।
চীন ও ভিয়েতনামে ঋণ খেলাপি ও অর্থ আত্মসাৎকারীদের জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে। ঋণ খেলাপি হলে তারা বিমান বা রেলের টিকেট কিনতে পারেন না, ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতে পারেন না।
সিঙ্গাপুরে ঋণ খেলাপির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সাত বছরের জেল ও জরিমানার বিধান রয়েছে। একই রকম আইন রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া।
সেদেশে ঋণ পরিশোধে দেউলিয়া ঘোষিত হলে তিনি আর কোন আর্থিক কর্মকাণ্ডে জড়িত হতে পারেন না বা বাড়ি কিনতে পারেন না, সম্পদের মালিকও হতে পারেন না।
এরকম অভিযোগে সংযুক্ত আরব আমিরাতে সমস্ত সম্পদ জব্দ করা হয়। তিনি ঋণ পরিশোধ না করা পর্যন্ত আর কোন সম্পদের মালিক হতে পারবেন না।
দক্ষিণ কোরিয়ায় এমন প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা খেলাপি ঋণ অন্য প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রির ব্যবস্থা করে দেয়। এসব ঋণ অনেক সময় শেয়ারে রূপান্তর করার মাধ্যমে কোম্পানির মালিকানায় পরিবর্তন আনা হয়।
বাংলাদেশের আইন কতটা কঠোর?
আইনজীবীরা বলছেন, বাংলাদেশে খেলাপি ঋণ আদায়ে যে আইন রয়েছে, তাতে সর্বোচ্চ ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। কিন্তু সেই আইনেও বড় কোন ঋণ খেলাপির শাস্তির নজীর নেই।
এ ধরনের ক্ষেত্রে অর্থঋণ আদালত আইন, ব্যাংক কোম্পানি আইন এবং দেউলিয়া আইনের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে।
পাওনা ঋণ আদায়ে অর্থঋণ আদালতের শরণাপন্ন হতে পারে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান। ব্যাংক কোম্পানি আইনে ব্যাংকের ওপর নজরদারি বা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আর দেনা পরিশোধে অসমর্থ হলে দেউলিয়া ঘোষিত হতে পারে।
অর্থ ঋণ মামলা পরিচালনাকারী একজন আইনজীবী মোহাম্মদ তরিক উল্লাহ বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ‘’খেলাপি ঋণের জন্য অর্থঋণ আদালত ২০০৩ এর আলোকে আদালতে মামলা করতে হয়। সেই আইন অনুযায়ী জামানত রাখা সম্পদ জব্দ করা বা নিলাম করে দিতে পারে। কারও অপরাধ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ ছয়মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।‘’
এরকম শাস্তি হলে সে সাধারণত আর ঋণ পাওয়ার উপযুক্ত বিবেচিত হয় না। দেউলিয়া আইনে দেউলিয়া ঘোষিত হলে তিনি কোন নির্বাচনে অংশ নেয়া বা ভোট দিতে পারেন না, প্রজাতন্ত্রের কোন কাজে অংশ নিতে পারেন না, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণও গ্রহণ করতে পারেন না।
কিন্তু বাংলাদেশে সহস্রাধিক ব্যক্তি ঋণ খেলাপি বলে ব্যাংকগুলোয় তালিকাভুক্ত হলেও দেউলিয়া আইনে তাদের দেউলিয়া ঘোষণা করার নজীর নেই।
অর্থঋণ আদালতেই খেলাপি ঋণের অভিযোগে বর্তমানে ৭২ হাজার মামলা ঝুলে রয়েছে, যেখানে আটকে রয়েছে ১ লাখ ৬৬ হাজার কোটি টাকা।
আইন অনুযায়ী, ঋণ খেলাপি ব্যক্তিরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন না। কিন্তু মাত্র দুই শতাংশ কিস্তি দিয়ে ঋণ পুনঃ তফসিলের সুযোগ রাখা হয়েছে। অতীতে দেখা গেছে, এরকম পুনঃ তফসিলের সুযোগ নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়ার পর আবার তারা ঋণ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে, ওই ঋণ আদায় হয়নি।
খেলাপি ঋণ আদায়ে ২০১৯ সালে 'অর্থ ঋণ আদালত আইন ২০০৩' সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছিল বাংলাদেশের সরকার। যেখানে খেলাপি ঋণের জন্য পৃথক আদালত তৈরি করা, খেলাপি ঋণগ্রহীতাদের হালনাগাদ তথ্য নিয়মিত সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ করার মতো প্রস্তাবনা ছিল, যদিও তা এখনো পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি।
আইনজীবীরা বলছেন, সাধারণত যখন ঋণ দেয়া হয়, তখন সেটার জামানত হিসাবে সম্পদ রাখা হয়। সেটা বিক্রি করে ঋণের টাকা উঠে যাওয়ার কথা। কিন্তু সেখানে নানা অনিয়ম হয়, দেখা যায় যে সম্পদ রাখা আছে, তাতে ঋণের টাকা উঠে আসে না। সেখানে অ্যাসেসমেন্টে একটা ঝামেলা থাকে।
‘’ যারা সাধারণ ব্যবসায়ী, তাদেরটা মোটামুটি আদায় হয়ে যায়। কিন্তু খেলাপি ঋণের ক্ষেত্রে যারা বড় বড় ব্যবসায়ী, ঋণের পরিমাণ বড়- তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে। এরা আইনের যে ফাঁকফোকর আছে, সেগুলোর সুবিধা নেন। আবার অনেক আছেন, যারা বিদেশে পালিয়ে গেছেন। তাদের প্রতিষ্ঠানগুলোও দেখা যায় অস্তিত্ব থাকে না। ফলে এসব ঋণ আর আদায় হয় না, ‘’ বলেন মি.তরিক উল্লাহ।
তিনি বলছেন, খেলাপি ঋণ ঠিকমতো আদায় করতে না পারার পেছনে অনেক সময় ব্যাংকের গাফিলতিও দায়ী। কারণ যখন ঋণ দেয়া হয়ে থাকে, সেখানে যাচাই-বাছাই, সম্পত্তির মূল্যায়ন- ইত্যাদিতে ব্যাংকের কর্মকর্তাদের একটা গাফিলতি দেখা যায়। পরবর্তীতে বিচার কার্যক্রমে গিয়ে বাস্তবের সঙ্গে অনেক কিছুর মিল পাওয়া যায় না।
‘’হয়তো মর্টগেজের কাগজপত্র ঠিক মতো নেই। হয়তো বন্ধক রাখা সম্পদের মূল্য যতটা দেখানো হয়েছে, বাস্তবে তার দাম অনেক কম। ফলে নিলাম হলেও দেখা যায়, সেই টাকা উঠে আসে না। ফলে রিকভারি করা নিয়েও অনেক সময় ব্যাংকের ভেতরে অনীহা থাকে,’’ বলছেন মি. তরিক উল্লাহ।
রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব
বাংলাদেশে খেলাপি ঋণ কমাতে নানা উদ্যোগের কথা বলা হলেও এটার জন্য যে ধরনের দৃঢ় রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের প্রয়োজন, সেটার ঘাটতি আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াতেও অনেক ধরনের দুর্বলতা আছে বলে বলছেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের ডিস্টিংগুইশড ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান।
তিনি বলছেন, ‘’ঋণ খেলাপিদের অনেকেই বেশ শক্তিশালী। তারা এটা করে পালিয়ে যাচ্ছেন, আবার কেউ কোন রকমের বিচারের সম্মুখীন হচ্ছেন না, কেউ আইনের মুখোমুখি হলেও দীর্ঘসূত্রিতার কারণে কোন সমাধান হয় না। বাংলাদেশ ব্যাংকও যেসব উদ্যোগ মাঝে মাঝে নেয়, সেগুলো স্বাধীনভাবে বাস্তবায়ন করতে গিয়ে তারা নানারকম বাধাবিপত্তির সম্মুখীন হন।‘’
মি. রহমান বলছেন, আইন আছে বেশ কিছু, কিন্তু সেগুলোর অনেক দুর্বলতা আছে। এমনকি টাকা পাচারের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ শাস্তি মাত্র ১২ বছর। কিন্তু সমস্যা হলো, আইন যেটুকু আছে, সেটারও প্রয়োগ নেই। সেই কারণে অনেকে মনে করেন, তারা ব্যাংকের ঋণের টাকা ফেরত না দিলেও কিছু হবে না। অনেকে এভাবে টাকা বাইরেও নিয়ে যান।
বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদরা পরামর্শ দিয়েছেন, খেলাপি ঋণের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে যাচাই করে দেখতে হবে, কোন খেলাপি ঋণ ইচ্ছাকৃত আর কোনটা অনিচ্ছাকৃত। যেগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে খেলাপি হচ্ছে, সেক্ষেত্রে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া উচিত।