পশ্চিমা দেশগুলোর বাইরে বিশ্বব্যবস্থার এক নতুন ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার ডাক দেয়া হয়েছে 'ব্রিকস' জোটের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এক সম্মেলনে। ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা - এই দেশগুলোকে নিয়ে গঠিত জোট ব্রিকসকে দেখা হয় শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট 'জি-সেভেন'-এর বিকল্প হিসেবে।
দক্ষিণ আফ্রিকার রাজধানী কেপটাউনে এই সম্মেলনে স্বাগতিক পররাষ্ট্রমন্ত্রী নালেডি প্যান্ডর বলেন, ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা, অসাম্য ও নিরাপত্তাহীনতায় বিভক্ত পৃথিবীকে এক বৈশ্বিক নেতৃত্ব দেয়াটাই হচ্ছে এ জোটের রূপকল্প।
ব্রিকস দেশগুলোর মোট জনসংখ্যা ৩২০ কোটিরও বেশি - যা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশ।
কেপটাউনে দুদিনব্যাপি সম্মেলনের প্রথম দিনে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকর বলেন, এই জোট থেকে অবশ্যই একটি জোরালো বার্তা দিতে হবে যে বর্তমান বিশ্ব বহু-মেরুভিত্তিক, এখানে নতুন ভারসাম্য তৈরি হচ্ছে এবং পুরোনো পথে নতুন পরিস্থিতির মোকাবিলা করা যাবে না।
তিনি বলেন, "আমরা যে সমস্যাগুলোর সম্মুখীন তার মূলে রয়েছে অর্থনীতির কেন্দ্রীভবন, এবং এর ফলে অনেকগুলো দেশ অল্প কয়েকটি দেশের দয়ার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।"
ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাউরো ভিয়েরা ব্রিকসকে "বহু-মেরুভিত্তিক এক বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তোলার পথে অপরিহার্য' বলে বর্ণনা করে বলেন - এটি উন্নয়নশীল দেশগুলো প্রয়োজনের প্রতিফলন ঘটাবে।
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেন, সৌদি আরব সহ এক ডজনেরও বেশি দেশ এ জোটে যোগ দেবার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
চীনের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী মা ঝাওশু বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলো এবং বিকাশমান বাজার অর্থনীতির দেশগুলোকে সহায়তা দেবার জন্য ব্রিকস জোটকে সম্প্রসারিত করা যেতে পারে।
ইউক্রেন যুদ্ধের ছায়া পড়েছে ব্রিকস সম্মেলনের ওপর
বিবিসির সংবাদদাতা অলিভার স্লো জানাচ্ছেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ কেপটাউনের এ সম্মেলনের ওপর ছায়া ফেলেছে।
এসব অভিযোগের কারণে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত ( আইসিসি) । যেহেতু দক্ষিণ আফ্রিকা এ আদালতের একটি সদস্য দেশ - তাই আগস্ট মাসে এখানকার জোহানেসবার্গ শহরে অনুষ্ঠেয় ব্রিকসের শীর্ষ সম্মেলনে যদি মি. পুতিন যোগ দিতে আসেন তাহলে তাকে তারা গ্রেফতার করতে পারবে।
তবে দেশটির একজন উপমন্ত্রী এ সপ্তাহেই বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, মি. পুতিনকে গ্রেফতার করা হবে কিনা সরকারকে সে সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার আইনে পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিজ প্যান্ডরও এক প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন - এ ব্যাপারে তার দেশের চূড়ান্ত অবস্থান জানাবেন প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা।
কেপটাউনের সম্মেলনে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের উপস্থিতির প্রতিবাদ করে একদল বিক্ষোভকারী। তারা মি. লাভরভের ছবিসম্বলিত প্ল্যাকার্ড তুলে ধরে যাতে লেখা ছিল "শিশু হত্যাকারী।"
একজন বিক্ষোভকারী এএফপি বার্তা সংস্থাকে বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকার কর্মকর্তারা মি. লাভরভের সাথে হাত মেলাচ্ছেন - এ দৃশ্য দেখাটা ছিল যন্ত্রণাদায়ক।
দক্ষিণ আফ্রিকার ক্ষমতাসীন এএনসি দলের সাথে রাশিয়ার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক রয়েছে এবং ইউক্রেনে রুশ অভিযানের সমালোচনা করতেও অস্বীকার করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা।
গত মাসে জাপানের হিরোশিমা শহরে অনুষ্ঠিত জি-সেভেনের শীর্ষ সম্মেলনে ব্রাজিল ও ভারতের নেতারা যোগ দিয়েছিলেন এবং ওই সম্মেলনে জি-সেভেন দেশগুলো রাশিয়া ও চীনের তীব্র সমালোচনা করে।