শেয়ার বাজার

গাজায় একদিনে ২১ ইসরাইলি সেনা নিহত, চরম হতাশায় শাসক গোষ্ঠীর নেতারা

গাজায় একদিনে  ২১ ইসরাইলি  সেনা নিহত, চরম হতাশায় শাসক গোষ্ঠীর নেতারা
সারাবিশ্ব

সিসিএন ডেস্ক : গাজা উপত্যকার কেন্দ্রে অবস্থিত আল-মাগাজি শরণার্থী শিবিরে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধকামী সংগঠনগুলোর সমন্বিত অভিযানের ফলে ২১ জন ইহুদিবাদী সৈন্য নিহত হয়। গাজা উপত্যকায় স্থল হামলা শুরুর পর এক দিনে এত বেশি সংখ্যক ইসরাইলি সৈন্য আর নিহত হয়নি। এছাড়াও, ইসরাইলি সেনাবাহিনী ঘোষণা করেছে যে গত ২৪ ঘন্টায় গাজা উপত্যকায় চলমান যুদ্ধের সময় সেনাবাহিনীর আরও ১৭ সৈন্য আহত হয়েছে। 

ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগেরি বলেছেন, মধ্য গাজায় ওইসব সৈন্য নিহত হয়। হামাস যোদ্ধারা ইসরাইলি সৈন্যদের অবস্থানরত দুটি দোতলা ভবনের মাঝখানে থাকা একটি ট্যাংকে রকেট-চালিত গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটায়। ইসরাইলি সৈন্যরা তখন ভবন দুটি গুঁড়িয়ে দিতে সেখানে মাইন বসাচ্ছিল। ঠিক ওই সময়ই হামাসের গ্রেনেডটি আঘাত হানে। এতে সেখানে থাকা মাইনগুলোও বিস্ফোরিত হয়। আর দ্রুত ভবন দুটি ধসে পড়ে। এতে ইসরাইলি সৈন্যরা দেয়ালের নিচে চাপা পড়ে প্রাণ হারায়। ঘটনাটি ঘটে মধ্য গাজায় সোমবার বিকেল ৪টার দিকে। এই হামলায় ১৯ ইসরাইলি সৈন্য নিহত হয়। আরেকটি হামলায় ইসরাইলের একটি ট্যাংককে টার্গেট করে হামাস।

"কঠিন, বেদনাদায়ক এবং অসহনীয় সকাল", "যুদ্ধ শুরুর পরে সবচেয়ে কঠিন দিন", "বেদনাদায়ক সকাল" এবং "আমাদের হৃদয় ভেঙে গেছে"; গতকালের ভয়াবহ ঘটনা সম্পর্কে ইসরাইলি শাসকগোষ্ঠীর নেতারা যে বর্ণনাগুলো প্রকাশ করেছেন সেগুলো তারই অংশ। ইসরাইলি সেনাবাহিনী গতকালকে (যুদ্ধের ১০৯তম দিন) গাজা যুদ্ধের সবচেয়ে কঠিন দিন বলে অভিহিত করেছে। এছাড়া গতকাল গাজা যুদ্ধে সবচেয়ে কঠিন দিন ছিল বলে মন্তব্য করেছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি বলেন, চলমান যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর সবচেয়ে কঠিন দিন ছিল গতকাল। 

এই ইস্যুটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল গাজা যুদ্ধের ১০৯তম দিনটি ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর জন্য সবচেয়ে ভয়ানক দিন ছিল। ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যোদ্ধারা এর আগে একদিনে কয়েক ডজন সৈন্যকে হত্যা করলেও ইসরাইলি সেনাবাহিনী তা স্বীকার করেনি। সেনাবাহিনী আগের দিনের হতাহতের কথা স্বীকার করেছে। ইসরাইলি সেনাবাহিনী গাজা উপত্যকার উত্তর ও কেন্দ্রে ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর আল-মাগাজি শরণার্থী শিবিরে প্রতিরোধ অভিযান চালানো হয়। ইসরাইলি সেনাবাহিনী ভেবেছিল যে ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের কাছ থেকে তারা তেমন মারাত্মক প্রতিরোধের মুখোমুখি হবে না, কিন্তু আল-মাগাজি অভিযান এই ধারণাটিকে ভুল প্রমাণ করেছে এবং আবারও অধিকৃত জেরুজালেম সরকারের গোয়েন্দা ব্যর্থতা সবার সামনে এসেছে ।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল যে আল-মাগাজি শরণার্থী শিবিরে অভিযান অন্য যেকোনো কিছুর চেয়ে বেশি প্রমাণ করেছে যে গাজা ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীর জন্য একটি চোরাবালিতে পরিণত হচ্ছে। গাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধের চতুর্থ মাস শেষ হতে চলেছে। তবুও, ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠী তার সামরিক লক্ষ্য অর্জনে সফল হয়নি, অর্থাৎ বন্দীদের মুক্তি এবং হামাসকে ধ্বংস করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয় নি। আল-মাগাজি অভিযান প্রমাণ করেছে যে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ অদৃশ্যৃ তো হয় নিই বরং ১০৯ দিন পর প্রতিরোধকামী যোদ্ধারা এখনো ইসরাইলি সেনাবাহিনীর উপর প্রচণ্ড আঘাত হানতে সক্ষম। তাই ইসরাইল যদি গাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যায় তবে তাদেরকে আরও ভয়াবহ প্রতিঘাতের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। 

রাজনৈতিক অঙ্গনে নেতানিয়াহু যখন কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন তখন সামরিক ক্ষেত্রে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর উপর এই আঘাাত এসেছে। যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ার পাশাপাশি নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ও তার পদত্যাগের দাবি বেড়েছে। যুদ্ধ মন্ত্রিসভার সদস্য আইজেনকোট যুদ্ধ থামানোর মূল্যে বন্দি বিনিময়ের দাবি করেছেন। তবে যুদ্ধবিরতি বিষয়ে সর্বশেষ খবরে জানা গেছে যে হামাস ইসরাইলের সব বন্দীদের মুক্তির বিনিময়ে দুই মাসের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। হামাস গাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ও অপরাধের সম্পূর্ণ অবসান দাবি করেছে।

সুত্র: পার্স টুডে