শেয়ার বাজার

নতুন মুদ্রানীতি প্রবৃদ্ধির চেয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে

নতুন মুদ্রানীতি প্রবৃদ্ধির  চেয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে
অর্থনীতি ব্যাংক-বিমা

মুদ্রানীতির কাঠামোতে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। নতুর মুদ্রানীতির কেন্দ্রে থাকবে সুদহার। এর লক্ষ্যমাত্রা থাকবে সুদহারকেন্দ্রিক। এবারের মুদ্রানীতিতে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের চেয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। এ জন্য নীতি সুদহার তথা রেপো ও রিভার্স রেপোর সুদ বাড়তে পারে। এ ছাড়া গ্রাহক পর্যায়ে ৯ শতাংশ সুদহারের সীমা তুলে নতুন ব্যবস্থার ঘোষণা আসছে। আগামী রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের সভাকক্ষে আগামী জুলাই-ডিসেম্বর মেয়াদের মুদ্রানীতি ঘোষণা করবেন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।

বর্তমান গভর্নর যোগদানের পর এটা হবে দ্বিতীয় মুদ্রানীতি। আগের গভর্নর ফজলে কবির ২০১৬ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বছরে একবার মুদ্রানীতি ঘোষণা শুরু হয়। তবে আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের শর্তের কারণে আবার দু’বার করা হচ্ছে। এবারের মুদ্রানীতিতে যেসব পরিবর্তন আসছে তার বেশিরভাগই হচ্ছে আইএমএফের শর্ত পরিপালনের জন্য।

বাংলাদেশ ব্যাংক সর্বশেষ চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি ব্যাংকগুলোর কাছে ধারের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত পুনঃক্রয় চুক্তির (রেপো) সুদহার ২৫ শতাংশীয় পয়েন্ট বাড়িয়ে ৬ শতাংশ নির্ধারণ করে। আর ব্যাংক থেকে টাকা তোলার ক্ষেত্রে বিপরীত পুনঃক্রয় চুক্তি (রিভার্স রেপো) সুদ বেসিস পয়েন্ট ২৫ বাড়িয়ে ৪ দশমিক ২৫ শতাংশ করে। করোনার প্রভাব শুরুর পর রেপো ও রিভার্স রেপোর সুদহার অনেক কমানো হয়। তবে গত বছরের মে মাসের আগ পর্যন্ত রেপোর সুদহার ছিল ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ। সেখান থেকে কয়েক দফায় বাড়ানো হয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বিশ্বব্যাপী চার ধরনের লক্ষ্যমাত্রাভিত্তিক মুদ্রানীতি প্রচলতি। এগুলো হলো– সুদহার, মূল্যস্ফীতি, মুদ্রা সরবরাহ এবং বিনিময় হার। বাংলাদেশ ব্যাংক এত দিন ‘মূল্যস্ফীতি টার্গেটিং’ মুদ্রানীতি প্রণয়ন করে আসছিল। তবে আইএমএফের পরামর্শে এবারে ‘সুদহার টার্গেটিং’ হবে।

আগামী অর্থবছরের বাজেটে সরকার মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে সীমিত রাখা এবং সাড়ে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। বর্তমান বাস্তবতায় যা বাস্তবায়নযোগ্য নয় বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। বাংলাদেশ ব্যাংকও মনে করে, লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে না।

সরকারের ঋণ লাখ কোটি টাকার কাছাকাছি : উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে এমনিতে মানুষের সঞ্চয় ক্ষমতা কমেছে। সঞ্চয়পত্র যে পরিমাণ বিক্রি হচ্ছে, ভাঙাচ্ছে তার চেয়ে বেশি। আবার ডলার বিক্রির কারণে বাজার থেকে প্রচুর টাকা উঠে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। এর মধ্যে সরকারের ঋণ দ্রুত বাড়ছে। চলতি অর্থবছরের গত ৬ জুন পর্যন্ত সরকারের ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৯৭ হাজার ৯৪ কোটি টাকা। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে সরকারের সর্বোচ্চ ঋণ ছিল ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা।

বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর হাতে ঋণযোগ্য তহবিল কম থাকায় অভ্যন্তরীণ উৎসে সরকারের ঋণ চাহিদার বেশিরভাগই মেটাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি অর্থবছরের ঋণের মধ্যে ৭৬ হাজার ১১৭ কোটি টাকা সরবরাহ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো দিয়েছে ২০ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে এক লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল। তবে সংশোধিত বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে এক লাখ ১৫ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা করা হয়েছে। আগামী অর্থবছরে এক লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

নতুন ব্যবস্থায় বাড়বে সুদ: বিদ্যমান ৯ শতাংশ সুদহারের সীমা তুলে দিয়ে নতুন ব্যবস্থা চালু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন সুদহার ব্যবস্থার নাম হবে ‘স্মার্ট’ তথা শর্ট টার্ম মুভিং এভারেজ রেট। ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের ৬ মাসের গড় সুদের সঙ্গে আপাতত সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ করিডোর যোগ হয়ে গ্রাহক পর্যায়ে সুদহার হিসাব করবে ব্যাংক। বর্তমানে ট্রেজারি বিলের গড় সুদহার ৭ শতাংশের নিচে রয়েছে। এতে গ্রাহক পর্যায়ে সুদহার হবে ১০ শতাংশের মতো। নতুন ঋণ বিতরণের পাশাপাশি বিদ্যমান ঋণেও এ ব্যবস্থা কার্যকর হবে। সুদহার যেন অনেক না বাড়ে, সে জন্য করিডোর রেট বাড়ানো-কমানো হবে। গ্রাহকের পাশাপাশি আন্তঃব্যাংক লেনদেনেও সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ সুদের একটি করিডোর দেওয়া হবে।