সাম্প্রতিক সময়ে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের মাধ্যমে সল্প সময়ে মুনাফা অর্জন জনপ্রিয় একটি মাধ্যম হয়ে উঠেছে। শেয়ার বাজারে প্রবেশের পূর্বে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সূচক সম্পর্কে জানা অত্যন্ত জরুরি। আইপিও তাদের মধ্যে অন্যতম একটি সূচক।
যারা শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করতে যাচ্ছেন তাদের জন্য আইপিও সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা রাখা প্রয়োজন। জানি এর গুরুত্ব আছে বলেই আপনি এখানে। তো চলুন দেখে নেই শেয়ার বাজারে নতুন আইপিও কি, এর ধরনগুলো কি কি এবং কিভাবে আবেদন করতে হয়!
আইপিও (IPO)
আইপিও (IPO) এর পূর্ণরুপ Initial Public Offering। যার অর্থ প্রাথমিক গণ প্রস্তাব। এটি মূলত একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে কোম্পানিগুলো শেয়ার বাজারে শেয়ার ইস্যু করে থাকে। চলুন এই প্রক্রিয়া সম্পর্কে আপনাদের স্বচ্ছ একটি ধারণা দেয়া যাক।
প্রাথমিক গণ প্রস্তাব প্রক্রিয়ায় প্রাইভেট কোম্পানি স্টক এক্সচেঞ্জের তালিকাভুক্ত হয় এবং প্রাইমারি শেয়ার মার্কেটে সর্বসাধারণের নিকট শেয়ার অফার করার অনুমতি পায়। এর মাধ্যমে কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের নিকট শেয়ার বিক্রয় করে পাবলিক কোম্পানিতে পরিণত হয়।
এভাবে কোম্পানি মূলধন সংগ্রহ করার অনুমতি পায় এবং বিনিয়োগকারী ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানগুলো শেয়ার ক্রয়ের জন্য আবেদন করার সুযোগ পায়।
আইপিও(IPO) এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে প্রাইভেট কোম্পানি বিনিয়োগ ইচ্ছুক ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে টাকা উত্তালন করার সুবিধা অর্জন করে, একই সাথে বিনিয়োগ ইচ্ছুক ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠান সেই বিনিয়োগের উপর আয় করার সুযোগ লাভ করে।
অর্থাৎ আইপিওকে এমন একটি প্রক্রিয়া বলা যায় যেখানে কোম্পানি আইনে রেজিস্ট্রার্ড প্রাইভেট কোম্পানিগুলো বিনিয়োগ বৃদ্ধির সাথে সাথে পাবলিক কোম্পানিতে পরিণত হতে পারে।
IPO-এর ধরন
শেয়ার বাজারে দুই ধরনের আইপিও রয়েছে। অর্থাৎ আইপিওতে দুই ভাবে শেয়ারের মুল্য নির্ধারণ করা যায়। এগুলো হল-
▶️ ফিক্সড প্রাইস:
ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতিতে শেয়ারগুলির মূল্য নির্দিষ্ট থাকে। এই পদ্ধতিতে শেয়ার মূল্যের সাথে কোন প্রিমিয়াম যোগ হয় না এবং শেয়ারের মূল্যের কোন পরিবর্তন হয় না। যে কোনও ক্রেতা বা বিনিয়োগকারী যে পরিমাণ শেয়ার ক্রয় করতে ইচ্ছুক সেই পরিমাণ স্টক সংখ্যা পেতে পারে।
▶️ বুক বিল্ডিং:
বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে কোম্পানি শেয়ারের মূল্যের সাথে কিছু অতিরিক্ত মূল্য প্রিমিয়াম হিসেবে যোগ করে। এই মূল্য ব্র্যান্ড নির্ধারণ করে। কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা বিডিং এর মাধ্যমে শেয়ার মূল্য থিক করে থাকেন। সাধারন বিনিয়োগকারীদের জন্য বিডিং প্রাইসের চেয়ে ১০% কমে শেয়ারের মূল্য নির্ধারিত হয়ে থকে। বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে ২০% এর বেশিতে কখনো মুল্য ধ্যার্য করা হয় না।
কিভাবে আইপিও আবেদন করা যাবে ?
অর্থ উত্তোলনের উপায় হচ্ছে আইপিও। এতে আবেদনের ধাপগুলো জেনে নেয়া যাক।
▶️ আইপিও আবেদনের জন্য মিডওয়ে সিকিউরিটিজ লিমিটেডে আপনার একটি বিও একাউন্ট থাকতে হবে
▶️ মিডওয়ে সিকিউরিটিজ লিমিটেডে বিও একাউন্টের মাধ্যমে শেয়ার ক্রয়ের জন্য আবেদন করে দেয়। এর জন্য নির্ধারিত সময়ে একাউন্টে টাকা জমা দিতে হবে।
▶️ আইপিও তে শেয়ার ক্রয়ের জন্য লট অনুযায়ী আবেদন করা হয়ে থাকে। এক লটে ৫০টি অথবা ১০০টি স্টক থাকতে পারে। এখানে নিজের পছন্দমতো স্টক কেনার সুবিধা নেই।
▶️ আইপিও তে আবেদন করার ২০/২১ দিনের মধ্যে সাধারনত লটারির ড্র করা হয়। লটারি ড্র করার ২/৩ ঘন্টা পর অনলাইনে রেজাল্ট দেখা যায়।
▶️ যদি আপনার জামা করা পুরো টাকার শেয়ার বরাদ্দ না পান তবে বাকি টাকা আপনার বিও অ্যাকাউন্ট নাম্বারে রিফান্ড হয়ে যাবে। টাকা রিফান্ড হতে ২/৩ দিন সময় লাগতে পারে।
▶️ রিফান্ড হলে সেই টাকা দিয়ে পুনরায় সেকেন্ডারি মার্কেটে বিনিয়োগ করা যাবে।
IPO-তে বিনিয়োগ একটি লাভজনক প্রকল্প। বাংলাদেশে আইপিওকে নিরাপদ বিনিয়োগ ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। কিন্তু বিনিয়োগের আগে বেশ কিছু জিনিস মনে রাখতে হবে। যেমনঃ কোম্পানির ব্যাকগ্রাউন্ড, শেয়ার মূল্য, ভবিষ্যতের দিক পর্যালোচনা, বিনিয়োগের কৌশল পরিকল্পনা ইত্যাদি। এর জন্য শেয়ার বাজার নিয়ে প্রচুর গবেষণা এবং পর্যাপ্ত তথ্য সংগ্রহ করতে হবে।