মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে একমাত্র টেস্টে আফগানিস্তানকে ৫৪৬ রানের বিশাল ব্যবধানে হারাল বাংলাদেশ। ৬৬২ রানের পর্বতসম টার্গেট তাড়া করতে নেমে ২ উইকেটে ৪৫ রান তুলে শুক্রবার তৃতীয় দিন শেষ করে আফগানরা। গতকাল চতুর্থ দিন আর মাত্র ৭০ রান যোগ করে বাকি ৮ উইকেট হারায় অতিথি দলটি। বাংলাদেশের পেস তোপের মুখে অতিথিরা গুটিয়ে যায় ১১৫ রানে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে টেস্টে রেকর্ড জয় ধরা দেয়।
নিজেদের ২৩ বছরের ইতিহাসে ও ১৩৮ টেস্টে এর চেয়ে বড় জয় আগে কখনো পায়নি বাংলাদেশ। রানের দিক থেকে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয় ছিল ২২৬ রানের, ২০০৫ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এসেছিল সেই জয়। এবার তার দ্বিগুণেরও বেশি রানে জিতল টাইগাররা। এমনকি এই সংস্করণে রানের দিক থেকে এর চেয়ে বড় জয় আছে মাত্র দুটি। ১৯২৮ সালে অস্ট্রেলিয়াকে ৬৭৫ রানে হারিয়েছিল ইংল্যান্ড। এছাড়া ১৯৩৪ সালে ইংল্যান্ডকে ৫৬২ রানে হারিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। পাঁচশর বেশি রানের ব্যবধানে জয় আছে আর একটি। ১৯১১ সালে মেলবোর্নে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৫৩০ রানে হারিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। ২০১৮ সালে জোহানেসবার্গ টেস্টে অস্ট্রেলিয়াকে ৪৯২ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে ১০৭ বছর আগের সেই হারের প্রতিশোধ নেয় প্রোটিয়ারা।
২০১৯ সালে চট্টগ্রামে একমাত্র দেখায় বাংলাদেশকে ২০৯ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছিল আফগানিস্তান। এবার সেই হারের প্রতিশোধ নিল বাংলাদেশ।
গতকাল এক সেশনেরও কম সময়ের মধ্যে শেষ হয়ে যায় আফগানদের প্রতিরোধ। আগের দিন ১১ ওভার ও কাল ২৪ ওভার টিকে ছিল হাশমতউল্লাহ শহিদির দল। বাংলাদেশের পেস আগুনে পুড়েছে আফগানরা। তাসকিন ৩৭ রানে চারটি ও শরিফুল ইসলাম ২৮ রানে তিনটি উইকেট নেন। মেহেদী হাসান মিরাজ ও এবাদত হোসেন নেন একটি করে উইকেট।
আফগানিস্তান প্রথম ইনিংসে ৩৯ ওভার ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৩ ওভার ব্যাটিং করতে পেরেছে। রশিদ খানবিহীন দলটি দুই ইনিংস মিলে নাজমুল হোসেন শান্তর সমান রানও করতে পারেনি! শান্ত প্রথম ইনিংসে করেন ১৪৬, পুরো আফগানিস্তান দলও করে ১৪৬ রান! দ্বিতীয় ইনিংসে শান্ত করেন ১২৪ রান, আফগানরা করে ১১৫ রান। অর্থাৎ দুই ইনিংস মিলিয়ে শান্তর রানের চেয়েও ৯ রান কম করেছেন সফরকারী দলের ১১ জন।
জয় শেষে বাংলাদেশ দলনায়ক লিটন দাস অনুভূতি প্রকাশ করে বললেন, ‘আবহাওয়া খুবই গরম। এই গরমের মধ্যে খেলাটা মোটেও সহজ কিছু না। কৃতিত্ব দেব আমাদের ব্যাটারদের। শান্ত উভয় ইনিংসেই ভালো ব্যাট করেছে, দ্বিতীয় ইনিংসে জয় ও জাকিরও ভালো ব্যাট করেছে।’ পেসবান্ধব উইকেট নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের মানসম্পন্ন পেস বোলার ও স্পিনারও রয়েছে।’
দ্বিতীয় বাংলাদেশী ব্যাটসম্যান হিসেবে উভয় ইনিংসে সেঞ্চুরি করা নাজমুল হোসেন শান্ত হয়েছেন ম্যাচসেরা খেলোয়াড়। পুরস্কার হাতে নিয়ে তিনি বললেন, ‘প্রথমত, আমরা ম্যাচটি জেতায় আমি অনেক বেশি খুশি। দ্বিতীয়ত, খুশি আমি যেভাবে ব্যাটিং করেছি তা নিয়ে। আমি সেঞ্চুরি পাওয়ার পর এ নিয়ে কথা হচ্ছিল। তিনি (মুমিনুল হক) আমাকে স্বাগত জানিয়েছেন। আসলে খেলোয়াড় হিসেবে আমাদের সব ফরম্যাটেই পারফর্ম করতে হবে। নিজের সব পরিকল্পনা নিয়ে আমার স্পষ্ট ধারণা রয়েছে। ভবিষ্যতে এমন ফর্ম ধরে রাখতে হলে আমাকে কঠোর পরিশ্রম করে যেতে হবে।’
মাত্র সপ্তম টেস্ট খেলা আফগানদের পারফরম্যান্সে অনভিজ্ঞতার বিষয়টি ফুটে উঠল। তার ওপর এই টেস্টে নেই দলসেরা স্পিনার রশিদ খান। সব মিলিয়ে ইতিহাসের তৃতীয় সর্বোচ্চ হারের মুখে পড়ল তারা। ম্যাচ শেষে দলনায়ক হাশমতউল্লাহ শহিদি বললেন, ‘মাচের শুরুর দিন থেকেই আমরা পরিকল্পনামতো খেলতে পারিনি। তবে ইতিবাচক কিছু দিক আছে। নিজাত (মাসুদ) খুবই ভালো করেছে। আমরা দীর্ঘ বিরতির পর টেস্ট খেলছি। আমরা যত বেশি খেলব, তত বেশি শিখব ও টেস্ট ক্রিকেটে উন্নতি করব।’