শেয়ার বাজার

বিনিয়োগ, শিল্পায়ন ও রপ্তানীর জন্য বাংলাদেশ হবে আকর্ষণীয় গন্তব্য- শেখ হাসিনা

বিনিয়োগ, শিল্পায়ন ও রপ্তানীর জন্য বাংলাদেশ হবে আকর্ষণীয় গন্তব্য- শেখ হাসিনা
জাতীয়

ফিকি’র ৬০তম বর্ষপূর্তি ও ইনভেস্টমেন্ট এক্সপো ২০২৩-এর উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী

সিসিএন ডেস্ক : বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে রাখা ধারাবাহিক ভূমিকা এবং সেই গৌরবময় যাত্রার ছয় দশক উদযাপন উপলক্ষ্যে ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’র (ফিকি) ৬০তম বর্ষপূর্তি ও ইনভেস্টমেন্ট এক্সপো ২০২৩-এর উদ্বোধন করেছেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, এমপি। আজ (১৯ অক্টোবর, ২০২৩) থেকে রেডিসন ব্লু ঢাকা ওয়াটার গার্ডেনে দুই-দিনব্যাপি এই অনুষ্ঠান ও এক্সপো শুরু হয়েছে।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী “ক্যাটালাইজিং গ্রেটার এফডিআই ফর ভিশন ২০৪১: প্রায়োরিটিজ ফর বিল্ডিং এ কনডিউসিভ ট্যাক্স সিস্টেম ইন বাংলাদেশ”-শীর্ষক একটি গবেষণা বই এবং “ইএসজি স্ট্র‍্যাটেজিস অ্যান্ড ইমপেক্ট ফ্রম দ্য মেম্বারস অব ফিকি”-শীর্ষক একটি প্রকাশনারও উদ্বোধন করেন।

উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, এমপি বলেন, “বাংলাদেশকে একটি নির্ভরশীল বাণিজ্যকেন্দ্র হিসেবে তৈরি করার লক্ষ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান সবসময় অভ্যন্তরীণ ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে কাজ করেছেন। জাতির পিতার আদর্শে আদর্শিত বর্তমান এই সরকার তৃণমূল পর্যায়ের উন্নতিতে বেসরকারী খাতকে আরও শক্তিশালী ও সুযোগ বৃদ্ধির প্রচেষ্টা করে যাচ্ছে। দেশের হাইটেক পার্কগুলোকে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে এবং বিনিয়োগ নীতিকে আরও সহজতর করার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। জ্বালানী, পানি, লজিস্টিকস ও পরিবহন খাতে ৩৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অবকাঠামো গড়ার সুযোগ রয়েছে। আমাদের লক্ষ্য শিল্পায়ন, বিনিয়োগ ও রপ্তানীর জন্য বাংলাদেশকে একটি আকর্ষণীয় গন্তব্যে পরিণত করা। আর এই লক্ষ্য অর্জনে ফিকি অবিরাম কাজ করে যাচ্ছে। আগামীতেও ফিকি দেশে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে বিশেষ সহযোগীতা করবে বলে আমি আশাবাদী।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, “আমাদের এই ধারাবাহিক উন্নয়নের যাত্রায় ফিকি’র প্রতিটি সদস্যদের নিরলস প্রচেষ্টাকে আমি সাধুবাদ জানাচ্ছি। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে এই ধারা আমাদেরকে বিশ্বব্যাপী একটি শক্তিশালী প্রতিযোগী হিসেবে সকলের সামনে তুলে ধরবে। একইসাথে, দেশের অভ্যন্তরে প্রতিভার মুল্যায়ন ও সে অনুযায়ী কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশের উন্নয়নে অবদান রাখা সকল বিনিয়োগকারীদের প্রতি আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।”

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, “সফলতার ৬০ বছরে ফিকির এই পদার্পণকালে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই ফিকির সকল সদস্য ও সম্মানিত স্টেকহোল্ডারদের যাদের নিরলস প্রচেষ্টায় আজ এই বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। দেশে এখন ১০০টিরও বেশি অর্থনৈতিক জোন তৈরি করা হয়েছে এবং  বিগত বছরের তুলনায় ২০২৩ সালে ২০ শতাংশ বেশি এফডিআই আসবে বলে আমরা সকলে আশাবাদী। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, জাতির পিতার স্বপ্নের দেশ গঠনে এবং ব্যবসায়িক ও অর্থনৈতিক অবকাঠামো উন্নয়নে ফিকি কাজ করে যাচ্ছে এবং আগামীতেও এই ধারাবাহিক উন্নয়ন অব্যাহত রাখবে।”

ফিকি’র সভাপতি নাসের এজাজ বিজয় বলেন, “জাতির পিতার আদর্শে লালিত ফিকি-এর প্রতিটি সদস্য বাংলাদেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। এই দেশের ব্যবসাবান্ধব পরিবেশে নিজেদের অংশীদ্বারত্বকে স্থায়ী করে বাংলাদেশকে একটি শান্তিপূর্ণ বিনিয়োগের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে ফিকি-এর সদস্যরা প্রচেষ্টা অব্যহত রেখেছে। বাংলাদেশের এই ধারাবাহিক সাফল্যের পেছনে ফিকি-এর অবদান অনেক এবং উন্নত দেশের লক্ষ্য অর্জনে ফিকি-এর ভবিষ্যত প্রতিশ্রুতি অটল থাকবে।”

ফিকি’র সহ-সভাপতি দীপল আবেউইক্রমা বলেন, “আমি গর্বিত যে, গত ছয় দশকের গৌরবময় যাত্রায় ফিকি এবং এই সংস্থার সদস্যরা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সাফল্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। বিশ্বের ৩৫টি দেশ থেকে ২১টি ব্যবসায়িক খাতে এফডিআই অর্জন করেছে। আমি আশা করি, এই অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়নে আমাদের ধারণা বিনিময় ও মূল খাতগুলোকে চিহ্নিত করতে সহায়তা করবে। এছাড়াও, এর মাধ্যমে নিত্যনতুন সমস্যার সমাধান, উদ্ভাবনী ক্ষমতার বিকাশ এবং নতুন অংশীদারিত্ব তৈরি করার সুযোগ সৃষ্টি করবে। আমাদের এই উদযাপনের মূললক্ষ্য হলো বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার বিশ্ব দরবারে তুলে ধরা এবং নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য সুযোগ প্রদান করা।”

অনুষ্ঠানে ‘গ্রিন ভ্যালু চেইন’ শীর্ষক একটি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। অধিবেশনের প্রধান অতিথি ছিলেন স্মার্ট বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক-এর সহ-সভাপতি এবং প্রাক্তন মূখ্য সচিব ও মূখ্য সমন্বয়ক (এসডিজি) মো: আবুল কালাম আজাদ। আরও উপস্থিত ছিলেন ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ-এর উপাচার্য অধ্যাপক ইমরান রহমান; ফিকি’র ইএসজি কমিটি’র সভাপতি ও পরিচালক জাভেদ আখতার; বিল্ড-এর সভাপতি ও এমসিসিআই-এর প্রাক্তন সভাপতি ব্যারিস্টার নিহাদ কবির; বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-এর (বিডা) আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ প্রচার বিভাগের সদস্য-৩ মোহসিনা ইয়াসমিন; ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি-এর (ডিসিসিআই) সভাপতি ব্যারিস্টার মো: সমীর সাত্তার; ইউএনডিপি’র আঞ্চলিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার; গ্রামীণফোন-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসির আজমান প্রমুখ।

সেমিনারে কৃষি জমির ক্ষতি, পানীয় জলের অভাব এবং ঘূর্ণিঝড়-সহ বিভিন্ন জলবায়ু ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশের পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে অধ্যাপক ইমরান রহমান বলেন, “প্রতিকূল জলবায়ু পরিস্থিতি জনিত অর্থনৈতিক ঝুঁকি মোকাবেলায় যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ ও বিনিয়োগ প্রয়োজন। এছাড়াও, এই পরিস্থিতি সামলে উঠতে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা থাকতে হবে।” তিনি তার বক্তব্যে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বহিরাগত অর্থায়ন ও ব্যক্তিগত বিনিয়োগের উপর জোর দেন এবং কার্বন কর আরোপ করার পরামর্শ দেন।

সেমিনারটিতে দেশে সামগ্রিক পণ্য ও পরিষেবার সাথে সংশ্লিষ্ট সকল ব্যবসায়িক ক্রিয়াকলাপ খাতে পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতি জোর আরোপ করা হয়। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সাথে সাথে দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে পরিবেশবান্ধব ও ব্যবসাবান্ধব করাই ছিলো এই অধিবেশনের আলোচ্য বিষয়।

ব্যারিস্টার নিহাদ কবির বলেন, “একটি পণ্য বাজারজাত ও বিক্রি করার পর এর ব্যবহার নিয়ে আমরা সজাগ থাকি না, যা কিছু কিছু পরিবেশ দূষণকারী বর্জ্যে পরিণত হয়। গুণগত মান রক্ষা করে পণ্যের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিতে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।”

সেমিনারের প্রধান অতিথি আবুল কালাম আজাদ বলেন, “ইএসজি ও এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে সবুজ ও সমৃদ্ধ পরিবেশ রক্ষায় আমাদের সকলকে সচেষ্ট হতে হবে। যদি সকল ক্ষেত্র থেকে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সকলে কাজ করে যাচ্ছে, তবুও আমি মনে করি সরকারি ও বেসরকারি উভয় ক্ষেত্র থেকে এই বিষয়টিকে আমাদের পাঠ্যপুস্তকে লিপিবদ্ধ করা দরকার। এতে করে ভবিষ্যত প্রজন্ম এই ব্যাপারে সজাগ থাকবে এবং গবেষণালব্ধ নিত্যনতুন ধারণা পাওয়া যাবে।”

দেশীয় শিল্পে বিনিয়োগে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে ইনভেস্টমেন্ট এক্সপো-তে ফিকি’র সদস্য ও বিভিন্ন সরকারি স্টেকহোল্ডারদের পরিচালনায় ৪০টি স্টল রয়েছে। ২০ নভেম্বর পর্যন্ত চলমান এই এক্সপো সর্বসাধারণের জন্যে উন্মুক্ত থাকবে। ফিকি’র ৬০তম বর্ষপূর্তি ও ইনভেস্টমেন্ট এক্সপো ২০২৩-এর কৌশলগত অংশীদার ছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং বিডা।

টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি চালনায় বিগত ছয় দশক ধরে ফরেইন ইনভেস্টরস চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ফিকি) বাংলাদেশের ২১টি খাতজুড়ে ৩৫টি দেশের ২০০টিরও অধিক সদস্যের প্রতিনিধিত্ব করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের সামগ্রিক বৈদেশিক উন্নয়ন সূচক-এর (এফডিআই) ৯০%, সরকারের অভ্যন্তরীণ রাজস্বের ৩০% এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে বাজার মূলধনের ২৫% অবদান রাখছে সংস্থাটি।