সিসিএন ডেস্ক : ডিজিটাল ব্যাংকের অনুমোদন পেল নগদ বিকাশ সহ ৮টি প্রতিষ্ঠান। দেশে প্রথমবারের মতো আটটি ডিজিটাল ব্যাংক দিয়ে শরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) ‘নগদ’ ও ‘কড়ি’ পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল ব্যাংক হিসেবে প্রাথমিকভাবে কার্যক্রম শুরু করবে। আর ডিজিটাল ব্যাংক হিসেবে পৃথক উইং চালুর অনুমোদন দেয়া হয়েছে বিকাশ, ডিজি-১০ ও ডিজিটঅল নামের তিনটি প্রতিষ্ঠানকে। আগামী ছয় মাস পর স্মার্ট ডিজিটাল ব্যাংক, জাপান বাংলা ডিজিটাল ব্যাংক ও নর্থ ইস্ট ডিজিটাল ব্যাংক নামে আরো তিনটি ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু হবে। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
অর্থনীতির চাহিদার তুলনায় ব্যাংকের সংখ্যা বেশি হওয়া সত্ত্বেও গত জুনের মাঝামাঝি ‘ডিজিটাল ব্যাংক’ গঠনের নীতিমালা জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর আগে গত ১ জুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট বক্তব্যে ডিজিটাল ব্যাংক চালুর ঘোষণা দেন। জুনের শেষ সপ্তাহ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ডিজিটাল ব্যাংক গঠনের লাইসেন্সের জন্য আবেদন আহ্বান করা হয়। গত ১৭ আগস্ট ছিল আবেদনের শেষ দিন। ওই দিন পর্যন্ত ডিজিটাল ব্যাংক গঠনের জন্য ৫২টি আবেদন জমা পড়েছিল। সেগুলো পর্যালোচনা করে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রাথমিকভাবে আটটি ডিজিটাল ব্যাংক অনুমোদনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
পর্ষদের সভা শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক গণমাধ্যমকে জানান, ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য ৫২টি আবেদন জমা পড়েছিল। এর মধ্যে নয়টি প্রতিষ্ঠানের আবেদন যোগ্য বিবেচিত হওয়ায় পরিচালনা পর্ষদে উপস্থাপন করা হয়। তার মধ্যে বীমা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত একটি আবেদন বাদ পড়েছে। বাকি আটটি গৃহীত হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘তিনটি ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার আবেদন এসেছিল বিদ্যমান ব্যাংকগুলো থেকে। এগুলো হলো ১০টি বেসরকারি ব্যাংকের জোট “ডিজি-১০”, ব্র্যাক ব্যাংক ও বিকাশের যৌথ আবেদন “বিকাশ ডিজিটাল ব্যাংক” এবং ব্যাংক এশিয়ার ‘ডিজিটঅল’। পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এ তিনটি ডিজিটাল ব্যাংক পৃথক উইন্ডো খুলে সেবাদান শুরু করতে পারবে।’
মেজবাউল হক বলেন, ‘প্রযুক্তি খাতের পাঁচটি কোম্পানি ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার অনুমোদন পেয়েছে। এগুলো হলো নগদ ডিজিটাল ব্যাংক, কড়ি ডিজিটাল ব্যাংক, স্মার্ট ডিজিটাল ব্যাংক, জাপান বাংলা ডিজিটাল ব্যাংক ও নর্থ ইস্ট ডিজিটাল ব্যাংক। এর মধ্যে নগদ ডিজিটাল ব্যাংক ও কড়ি ডিজিটাল ব্যাংককে এখনই লেটার অব ইনটেন্ট বা সম্মতিপত্র (এলওআই) দেয়া হবে। বাকি তিনটির এলওআই দেয়া হবে ছয় মাস পর।’
বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, নগদ ডিজিটাল ব্যাংকের সঙ্গে বর্তমান উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি সামিট ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারম্যান ফরিদ খানসহ বেশকিছু উদ্যোক্তা যুক্ত হয়েছেন। আর কড়ি ডিজিটাল ব্যাংকের মূল উদ্যোক্তা হলেন টেকনো হ্যাভেন নামের একটি কোম্পানির সিইও হাবিবুল্লাহ নেয়ামুল করিম। তিনি সাবেক অর্থ সচিব ফাতিমা ইয়াসমিনের স্বামী।
ডিজি-১০ নামে অনুমোদন পাওয়া ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স পেতে জোটবদ্ধ হওয়া বেসরকারি খাতের ১০টি ব্যাংক হলো সিটি ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক ও ট্রাস্ট ব্যাংক। এ ব্যাংকগুলো ১২৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকা বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছিল।
নীতিমালা অনুযায়ী, ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স পেতে ১২৫ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন থাকার শর্ত আরোপ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশে বাণিজ্যিক ব্যাংকের লাইসেন্স পেতে ৫০০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন থাকতে হয়। নীতিমালায় বলা হয়েছে, দেশে ডিজিটাল ব্যাংকের একটি প্রধান কার্যালয় থাকবে। এ কার্যালয় ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা ও সাপোর্ট স্টাফদের দপ্তর হিসেবে ব্যবহৃত হবে। পাশাপাশি সশরীরে বা ডিজিটাল পদ্ধতিতে গ্রাহকের অভিযোগ গ্রহণ ও নিষ্পত্তির কাজটি এ কেন্দ্রীয় দপ্তরে হবে। কিন্তু ডিজিটাল ব্যাংকগুলো প্রচলিত ব্যাংকের মতো সরাসরি কাউন্টারে গ্রাহকদের লেনদেন সেবা দিতে পারবে না। এ ব্যাংকের নিজস্ব কোনো শাখা, উপশাখা, এজেন্ট বা উইন্ডো থাকবে না। এমনকি নিজস্ব কোনো এটিএম, সিডিএম, সিআরএম বা স্পর্শযোগ্য ইনস্ট্রুমেন্ট থাকতে পারবে না।
ডিজিটাল ব্যাংকে কেওয়াইসি পরিপালন করে গ্রাহকরা অনলাইনে হিসাব খুলবে। হিসাব খোলার পর তারা ভিন্ন কোনো ব্যাংক বা এমএএফএস এজেন্ট, এটিএম বুথ, সিডিএম, সিআরএম নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে অনলাইনে অর্থ স্থানান্তর ও ব্যবহার করতে পারবে। একই পদ্ধতিতে নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তোলা যাবে। লেনদেন সহজ করতে ডিজিটাল ব্যাংক ভার্চুয়াল কার্ড, কিউআর কোড বা অন্য কোনো অগ্রসরমাণ প্রযুক্তিনির্ভর পণ্য চালু করতে পারবে। এ ব্যাংকের মাধ্যমে বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, শিক্ষার্থীর বেতন, সার্ভিস চার্জ ও ট্রেজারি চালানসহ সরকারি বিভিন্ন ফি পরিশোধ করা যাবে। যদিও বর্তমানে দেশের বেশির ভাগ ব্যাংকেরই এ ধরনের সেবা চালু রয়েছে।
ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স পেতে আবেদন করা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে তফসিলি ব্যাংক, বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, মোবাইলে আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান (এমএফএস), মোবাইল অপারেটর, স্টার্টআপ কোম্পানি, গ্যাস পাম্প কোম্পানি, ওষুধ কোম্পানি, ঢেউশিট উৎপাদনকারী কোম্পানিও রয়েছে। বিদেশী একাধিক প্রযুক্তি কোম্পানিও বিশেষ এ ব্যাংকের লাইসেন্স পেতে আবেদন করেছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের লাইসেন্স নিয়ে দেশে বর্তমানে ৬১টি তফসিলি ব্যাংক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এর মধ্যে ৪৩টি বেসরকারি খাতের। সরকারি বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত নয়টি ব্যাংকের পাশাপাশি বিদেশী নয়টি ব্যাংকও দেশে ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে। গত এক দশকে এক ডজনের বেশি ব্যাংকের লাইসেন্স ইস্যু করা হয়েছে। এবার আর্থিক খাতে আটটি ডিজিটাল ব্যাংক যুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হলো।