শুক্রাণু কিংবা ডিম্বাণুর প্রয়োজন নেই। জননকোষ ছাড়াই ভ্রূণের জন্ম! ঠিক এটাই ঘটেছে। স্টেম কোষের সাহায্যে কৃত্রিম মানবভ্রূণ তৈরি করেছেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় ও ক্যালটেকের বিজ্ঞানীরা। তবে গবেষণাগারে তৈরি এই ভ্রূণ আধুনিক ভ্রূণের মতো উন্নত নয়। বরং মানব বিবর্তনের গোড়ার সময়ের সাথে এর মিল রয়েছে। তবে বিজ্ঞানীদের আশা, এই পথ অনুসরণ করেই জটিলতম সমস্যার সহজ উত্তর পাওয়া যেতে পারে। জিনগত অসুখ, সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে গর্ভপাত, এ ধরনের সমস্যার সমাধান মিলবে।
তবে ‘কৃত্রিম মানবভ্রূণ তৈরি’ বিষয়টিই বিতর্কিত। নৈতিক ও আইনি প্রশ্ন রয়েছে। বেশির ভাগ দেশেই এই ধরনের গবেষণার আইনি স্বীকৃতি নেই। স্টেমকোষ থেকে ভ্রূণ তৈরির এই ধাপে মায়ের গর্ভের হৃৎপিণ্ডের ধুকপুকানি নেই, একটু একটু করে মস্তিষ্ক তৈরি হওয়া নেই। বরং কোষ থেকে একে একে প্লাসেন্টা, ইয়ক স্যাক, এমব্রায়ো বা ভ্রূণ তৈরি হওয়া। গবেষণাপত্রটি এখনো কোনো জার্নালে প্রকাশিত হয়নি। তবে তার আগেই বস্টনে ‘ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর স্টেম সেল রিসার্চ’-এর বার্ষিক সম্মেলনে হইচই ফেলে দিয়েছে এই গবেষণা।
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা ম্যাগডালেনা জারনিকা-গোয়েৎজা বলেন, ‘স্টেম কোষকে রিপ্রোগ্রাম করে আমরা মানব ভ্রূণের মডেল তৈরি করতে পেরেছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘যদিও এই মুহূর্তে গবেষণাগারের বাইরে কৃত্রিম ভ্রূণ তৈরির কোনো সম্ভাবনা নেই। সবটাই পরীক্ষামূলক স্তরে রয়েছে। কৃত্রিম উপায়ে তৈরি ভ্রূণ মানব শরীরে প্রতিস্থাপন করা অবৈধ কাজ। তাছাড়া গর্ভাবস্থার প্রাথমিক ধাপগুলো সফলভাবে পেরোলেও তারপর ওই কৃত্রিম ভ্রূণ পরিণতি পাবে কিনা, তা জানা নেই।’
গবেষণাগারে ভ্রূণ নিয়ে কাজ করার আইনি অনুমতি ১৪ দিন পর্যন্ত। এরপর ভ্রূণের বিকাশ সম্পর্কে জানতে হলে গর্ভাবস্থার স্ক্যান রিপোর্ট কিংবা কারো দান করা ভ্রূণ পরীক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই। মানব জীবনের এই অধ্যায় এক প্রকার ‘ব্ল্যাক বক্স’ হয়ে রয়েছে। অন্ধকারে আলো ফেলতে নতুন গবেষণাটি করা হয়েছে।
লন্ডনের ফ্রান্সিস ক্রিক ইনস্টিটিউট-এর ‘স্টেম সেল বায়োলজি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টাল জেনেটিকস’ বিভাগের প্রধান রবিন লোভেল-বেজ বলেন, ‘গবেষণাগারে স্টেম কোষ থেকে মানবভ্রূণ তৈরির কারণ, এই পদ্ধতিতে জীবনের প্রথম ধাপ সম্পর্কে চমকে যাওয়ার মতো বহু অজানা তথ্য জানা সম্ভব।’
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা