শেয়ার বাজার

মার্চ এসেছে সুখবর আসেনি!-ফজলুল বারী

মার্চ এসেছে  সুখবর আসেনি!-ফজলুল বারী
মতামত

দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি গোলমেলে। হাহাকার চারিদিকে। বেষ্টিক অর্থনীতিতে সমস্যা আছে। তবে উত্তরণের সম্ভনার যায়গাও আছে।
সামষ্টিক ও বেষ্টিক অর্থনীতির এ রসায়ন অদ্ভুত। তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় কিছুটা স্বস্তিদায়কও বটে।
অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকা শক্তি অর্থবাজারের সমস্যা গভীর। আশু নিরসনের সম্ভবনা কম। পুঁজিবাজার আইসিইউ-তে। সঠিক চিকিৎসা ও শুশ্রƒষার পরশ পেলে দ্রুত সুস্থ হবার সম্ভবনার যায়গাটি এখনো ফুরিয়ে যায়নি।
বেষ্টিক অর্থনীতির স্বস্তিকর অবস্থানের কারণ ওখানে সরকার ও সরকারী প্রশাসনের লম্বা হাতের ছোঁয়া অপেক্ষাকৃত কম।
অর্থ ও পুঁজিবাজারে সরকার ও সরকারী প্রশাসনের সার্বিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত। এ কারণে উভয় স্থানের সমস্যা গভীর ও জটিল।
তবে, পুঁজিবাজারের নিজস্ব বৈশিষ্ট রয়েছে। এ কারণে দ্রুত উজ্জীবিত হবার সক্ষমতা রাখে। বাজার ব্যবস্থাপনার অনিয়ম। অতি নিয়ন্ত্রণ। এ বাজারের উজ্জীবনি শক্তি কেড়ে নিয়েছে। এ দুটি সমস্যার উত্তরণ ঘটলে পুঁজিবাজার এখনো ফের ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতা রাখে।
পুঁজিবাজারের চলমান সংকটের অন্যতম কারণ, বাজার ব্যবস্থাপনার ভার পুঁজিবাজার বর্হিভূত লুটেরা বান্ধব শ্রেণীর হাতে পড়েছে। তারাই এ বাজারের সব সম্ভবানার সুযোগগুলোকে অসম্ভব করে তুলেছে। সাম্প্রতিক বাজার চিত্রেও এর অসংখ্য তথ্য প্রমান আছে।
পুঁজিবাজার ব্যস্থাপনার শীর্ষ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ আ্যন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এর চেয়ারম্যান ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের (ঢাবি ) শিক্ষক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। তিনি ডুগ ডুগি বাজিয়ে বিনিয়োগকারীদের প্রলুব্ধ করেন। বিনিয়োগকারীগন তাতে সাড়াও দেন।
রুবাইয়াত কমিশনের যাত্রা শুরুর এক পর্যায়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের লেনদেনের দৈনিক আকার এক হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। এ সময় বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত বিনিয়োকারীদের স্বপ্ন দেখান; “লেনদেনের আকার পাঁচ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। ডিএএসই এক্স সূচক ১০ হাজারে উন্নীত হবে।”
বিনিয়োগকারীদের কারসাজি মুক্ত পুঁজিবাজার উপহার দেয়ারও প্রতিশ্রুতিও তিনি দিয়েছিলেন। বিনিয়োগকারীগণ তাঁর কথায় আস্থা রাখেন। এ সময় বিভিন্ন উৎস হতে পুঁজির সমাবেশ ঘটতে শুরু করে। এ অবস্থা বেশীদিন স্থায়ী হয়নি। পুঁজিবাজার উল্টো পথে যাত্রা শুরু করে, কিছু দিন পর থেকেই।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত সপ্তাহে ডিএসই’র লেনেদেনের দৈনিক আকার পাঁচশ আট কোটি টাকার ঘরে নেমেছে। ডিএসইএক্স সূচক নেমে আসে দুই হাজার ২২০ পয়েন্টের ঘরে। এ সূচকটি বেশ কিছু দিন মাস ও বছর ধরে ছয় হাজার ২০০ পয়েন্ট থেকে ছয় হাজার পাঁচশ পয়েন্টের বৃত্তেই আটকে আছে।
অবস্থার আরো অবনতি ঘটলে, বিএসইসি পুঁজিবাজারকে ফ্লোর প্রাইস নামক আইসিইউতে পাঠিয়ে - ফেলে রাখে। একই সাথে সুচকের হাতে ও পায়ে ডান্ডা বেড়ীও পড়িয়ে দেয়।
এব্যবস্থায়, দীর্ঘ মেয়াদী বিনিয়োগাকারীদের মৌল ও শক্ত মৌল নির্ভর পোর্টফোলিও গুলোর ভারিত্ব ক্রমাগত হ্রাস পেতে থাকে। প্রতিদিন পুঁজি ক্ষরণ হচ্ছে।
ফ্লোর প্রাইসের কারণে পোর্টর্ফোলিও পুনর্গঠন করাও যাচ্ছে না। এমনকি, অতি জরুরী প্রয়োজনেও শেয়ার বিক্রি করতে পারছে না।
গত মাসের শেষ দিকে মার্চে সুখবর প্রাপ্তির ঘোষণা দিয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যান কাতারে উড়াল দেন।মার্চ এসেছে ঠিকই । পরিস্থিতির ইতিবাচক পরিবর্তন আসেনি।
উল্লিখিত ঘোষণায় -মার্চের প্রথম সপ্তাহের প্রথম দিন ডিএসইএক্স সূচক ৩৬ পয়েন্ট উঠেছিল ঠিকই তবে পরবর্তিতে সেটাই কাল হয়ে দাঁড়ায়। সাথে সাথেই সূচকের হাতে ও পায়ে ডান্ডা বেড়ী পড়িয়ে কোমড়ে রশী লাগিয়ে দেয় বাজার ব্যবস্থাপকরা।
উপরন্তু গত সপ্তাহে বিএসইসি থেকে খবর ছাড়ানো হয়; “শুনানি ছাড়াই পর্ষদ পুনর্গঠন করতে পারবে বিএসইসি”। এ ঘোষণা অন্তর্ঘাতমূলক। বিনিয়োগ বিনাশী। মৌলিক অধিকার পরিপন্থীও।
বাজার ব্যবস্থাপনায়ও অন্তর্ঘাতমূলক কারসাজির প্রশ্রয় রয়েছে। প্রতিদিন লেনদেনের শুরুতেই কিছু কিছু ব্রোকার হাউস থেকে লাখ লাখ বিক্রয় আদেশ বসিয়ে দেয়া হয়। তাতে ক্রেতাগন ভীত হয়ে কেনার ইচ্ছা পরিত্যাগ করে।
এরই মধ্যে ব্লকে কিছু কিছু কোম্পানির শেয়ারের লেনদেন ঘটছে। তাতে একটি পক্ষ ব্যপক লাভবান হচ্ছে। গত সপ্তাহে বেক্সিমকো ফার্মা ও এডিএন -এর দুটি বড় ব্লক ট্রেড অনুষ্ঠিত হয়েছে। মানে সমঝোতার মাধ্যমে শেয়ারের হাত বদল ঘটানো হয়েছে।
পুঁজিবাজার অতি নিয়ন্ত্রিত ও মন্দ বাজার ব্যবস্থপনার ফাঁদে না থাকলে স্বাভাবিক গতিতেই এ বাজার ঘুরে দাড়াতে পারতো। এর সুযোগও আছে।
বাজার ব্যবস্থাপনার বড় ধরনের সংস্কার ছাড়া পুঁজিবাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা যাবে না।আর সুশাসন নিশ্চিত করা ছাড়া, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরানোও সম্ভব হবে না।
বিএসইসি ছাড়াও ডিএসইসিতেও বড় ধরণের সংস্কার অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। ডিএসইকে একটি অর্থব প্রতিষ্ঠানের পরিণতি দেয়া হয়েছে।
অতি সম্প্রতি ডিএসই’র নতুন বোর্ড গঠিত হয়েছে। নতুন চেয়ারম্যান নির্বচিত হয়েছেন ঢাবি শিক্ষক ড. হাফিজ হাসান বাবু। নির্বাচনে তিনি সাবেক সচিব মো. আফজাল হোসেনকে বাজেভাবে পরাস্ত করেছেন।