ন্যায় ও ন্যায়বিচারের গুরুত্ব উপলব্ধি করার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে বর্ণিত এ সংক্রান্ত আয়াতগুলো বোঝার চেষ্টা করা। আজকের এ আলোচনায় আমরা পবিত্র কুরআনের এরকম ৮টি আয়াত তুলে ধরব যেখানে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ন্যায় ও ন্যায়বিচারের প্রসঙ্গ বর্ণিত হয়েছে:
১- আল্লাহ তায়ালার সকল কাজ ন্যায়বিচারের ওপর প্রতিষ্ঠিত।
"شَهِدَ اللَّهُ أَنَّهُ لا إِلهَ إِلاَّ هُوَ وَ الْمَلائِکَةُ وَ أُولُوا الْعِلْمِ قائِماً بِالْقِسْطِ لا إِلهَ إِلاَّ هُوَ الْعَزیزُ الْحَکیمُ"؛ [قرآن: آل عمران، ۱۸]
"আল্লাহ সাক্ষ্য দেন যে, তিনি ছাড়া অন্য কোনো মাবুদ নেই, ফেরেশতাগণ ও জ্ঞানী ব্যক্তিগণও (এই একই বিষয়ে) সাক্ষ্য প্রদান করেন যে, [আল্লাহর সকল কাজ] ন্যায়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত এবং মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময় আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন (সত্য) উপাস্য নেই।" [আলে-ইমরান, ১৮]
২- আল্লাহ তায়ালা বিন্দু পরিমাণ জুলুম বা অন্যায় করেন না।
"إِنَّ اللَّهَ لا یَظْلِمُ مِثْقالَ ذَرَّةٍ وَ إِنْ تَکُ حَسَنَةً یُضاعِفْها وَ یُؤْتِ مِنْ لَدُنْهُ أَجْراً عَظِیما"؛ [قرآن: نساء، 40]
"নিশ্চয়ই আল্লাহ অণু পরিমাণও অত্যাচার বা অন্যায় করেন না [তাঁর প্রতিটি কাজ ন্যায়ভিত্তিক] এবং যদি কেউ [ওই অণু পরিমাণ] সৎ কাজ করে তাহলে তিনি তা দ্বিগুণ করে দেন এবং স্বীয় পক্ষ হতে ওর মহান প্রতিদান প্রদান করেন।" [নিসা, ৪০]
৩- মানুষের মাঝে ন্যায়ভিত্তিক বিচার করুন।
"إِنَّ اللَّهَ یَأْمُرُکُمْ أَنْ تُؤَدُّوا الْأَماناتِ إِلى أَهْلِها وَ إِذا حَکَمْتُمْ بَیْنَ النَّاسِ أَنْ تَحْکُمُوا بِالْعَدْلِ إِنَّ اللَّهَ نِعِمَّا یَعِظُکُمْ بِهِ إِنَّ اللَّهَ کانَ سَمیعاً بَصیرا"؛ [قرآن: نساء، 58]
"নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, আমানত তার মালিককে প্রত্যর্পণ করবে। আর যখন তোমরা মানুষের মধ্যে বিচার-কার্য পরিচালনা করবে, তখন ন্যায়পরায়ণতার সাথে বিচার করবে। আল্লাহ তোমাদেরকে যে উপদেশ দেন, তা কত উৎকৃষ্ট! নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।" [নিসা, ৫৮]
৪- অপরের সঙ্গে শত্রুতার কারণে অন্যায় করো না।
"یا أَیُّهَا الَّذینَ آمَنُوا کُونُوا قَوَّامینَ لِلَّهِ شُهَداءَ بِالْقِسْطِ وَ لا یَجْرِمَنَّکُمْ شَنَآنُ قَوْمٍ عَلى أَلاَّ تَعْدِلُوا اعْدِلُوا هُوَ أَقْرَبُ لِلتَّقْوى وَ اتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ خَبیرٌ بِما تَعْمَلُونَ"؛ [قرآن: مائده، 8]
"হে মুমিনগণ! আল্লাহর উদ্দেশ্যে ন্যায় সাক্ষাদানে তোমরা অবিচল থাকবে কোন সম্প্রদায়ের প্রতি শক্ৰতা তোমাদেরকে যেন সুবিচার বুর্জনে প্ররোচিত না করে। তোমরা সুবিচার করবে, এটা তাকওয়ার অধিকতর নিকটবর্তী। আর তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর। নিশ্চয় তোমরা যা কর, আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবহিত।" [মায়েদা, ৮]
৫- মহান আল্লাহ এমনকি জালিমদের প্রতিও জুলুম করেন না।
"وَ لَوْ أَنَّ لِکُلِّ نَفْسٍ ظَلَمَتْ ما فِی الْأَرْضِ لاَفْتَدَتْ بِهِ وَ أَسَرُّوا النَّدامَةَ لَمَّا رَأَوُا الْعَذابَ وَ قُضِیَ بَیْنَهُمْ بِالْقِسْطِ وَ هُمْ لا یُظْلَمُونَ"؛ [قرآن: یونس 54]
"আর যমীনে যা রয়েছে, তা যদি প্রত্যেক যুলুমকারী ব্যক্তির হয়ে যায়, তবে সে মুক্তির বিনিময়ে সেসব দিয়ে দেবে এবং অনুতাপ গোপন করবে যখন তারা শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে। আর তাদের মীমাংসা ন্যায়ভিত্তিক করা হবে এবং তাদের প্রতি যুলুম করা হবে না।" [ইউনূস, ৫৪]
৬- মানুষের অধিকার প্রদান করার ক্ষেত্রে অন্যায় করো না।
"وَ یا قَوْمِ أَوْفُوا الْمِکْیالَ وَ الْمیزانَ بِالْقِسْطِ وَ لا تَبْخَسُوا النَّاسَ أَشْیاءَهُمْ وَ لا تَعْثَوْا فِی الْأَرْضِ مُفْسِدینَ" [قرآن، هود ۸۵]
"হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা ন্যায়সঙ্গতভাবে মাপো ও ওজন করো, লোকদেরকে তাদের প্রাপ্য বস্তু কম দিও না এবং যমীনে বিপর্যয় সৃষ্টি করে বেড়িও না।" [হুদ, ৮৫]
৭- মানুষকে ন্যায় ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করতে হবে।
"لَقَدْ أَرْسَلْنا رُسُلَنا بِالْبَیِّناتِ وَ أَنْزَلْنا مَعَهُمُ الْکِتابَ وَ الْمیزانَ لِیَقُومَ النَّاسُ بِالْقِسْطِ"؛ [قرآن: حدید، ۲۵]
"নিশ্চয় আমি আমার রাসূলদেরকে স্পষ্ট প্রমাণাদিসহ পাঠিয়েছি এবং তাদের সাথে কিতাব ও (ন্যায়ের) মানদন্ড নাযিল করেছি, যাতে মানুষ সুবিচার প্রতিষ্ঠা করে।" [হাদিদ, ২৫]
৮- মহান আল্লাহ সুবিচারকারীদের ভালোবাসেন।
"وَ أَقْسِطُوا إِنَّ اللَّهَ یُحِبُّ الْمُقْسِطین"؛ [قرآن: حجرات، ۹]
"তাদের মধ্যে ইনসাফের সঙ্গে ফয়সালা কর আর সুবিচার কর; আল্লাহ সুবিচারকারীদেরকে ভালোবাসেন।" [হুজুরাত, ৯] #