মুদ্রানীতির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহযোগিতা করা। এখন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নেই। তাহলে মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতি কীভাবে হবে। অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য প্রয়োজন বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি। কিন্তু মূল্যস্ফীতি, ডলার ও তারল্যসংকট, আমদানি কমে যাওয়া ইত্যাদি কারণে বিনিয়োগ কমে গেছে। ফলে বর্তমান সময়ে মুদ্রানীতিতে সবচেয়ে গুরুত্ব পাওয়া উচিত মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণে আনার বিষয়টি।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদের হারের ব্যবহার এখনো আমরা দেখিনি। এ ছাড়া ব্যাংকের তারল্য কমে যাওয়া, খেলাপি ঋণের বেড়ে যাওয়া, মুদ্রার বিনিময় হারের অস্থিতিশীলতা, প্রবাসী আয় কমে যাওয়া ইত্যাদি চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ফলে এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়েই নতুন মুদ্রানীতি প্রণয়ন করা প্রয়োজন।
বর্তমানে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৯ শতাংশের মতো, আর সুদের হার ৯ শতাংশ। তাহলে দুটি তো প্রায় সমান হয়ে গেছে। আবার মুদ্রার বিনিময় হার কয়েকটি হওয়ার কারণে বাজারে ভুল বার্তা যাচ্ছে এবং ডলারের বাজার স্থিতিশীল হচ্ছে না। আবার বড় বড় ব্যবসায়ী গোষ্ঠীকে সুবিধা দেওয়ার জন্য সুদের হার কমানো হচ্ছে না। বর্তমান বাস্তবতায় সুদের হার ও বিনিময় হার—উভয়ই বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া প্রয়োজন। আনুষ্ঠানিক ব্যাংকিং মাধ্যমে প্রবাসী আয় পাঠানো কীভাবে বাড়ানো যায়, সে উদ্যোগও নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দিলে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হতে পারে।
বাজেটে দেখলাম, সরকার প্রক্ষেপণ করেছে বিনিময় হার ১০৪ টাকা হবে। কিন্তু এখনই তো ১০৮-১০৯ টাকা হয়ে আছে। এ রকম প্রক্ষেপণগুলো বাস্তবসম্মত হওয়া প্রয়োজন।
আমরা দেখি, সরকার এমনভাবে নীতি প্রণয়ন করে, যাতে ঋণখেলাপিরা পার পেয়ে যায়। অথচ খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির কারণে তারল্যের ওপর প্রভাব পড়ছে। এ কারণে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশেষ করে ব্যাংক খাতের নীতি সংস্কার করা প্রয়োজন।
এ বছর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের টাকা ছাপানো থেকে বিরত থাকতে হবে। গতবার যখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকার ঋণ নেয়, তখন তারা ডলার বিক্রি করে বাজার থেকে টাকা তুলে নিয়েছিল। কিন্তু এখন তো আর ডলার বিক্রি করার অবস্থা নেই। ফলে সরকারকে ঋণ দিতে গিয়ে টাকা ছাপালে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পাবে।
আমাদের তো আমদানিনির্ভর অর্থনীতি। উৎপাদন ও বিনিয়োগের জন্য কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। কিন্তু এ জন্য প্রয়োজনীয় ডলার তো নেই। সুতরাং ডলারের সরবরাহ কীভাবে বাড়ানো যায়, সেদিকে মনোযোগ দিতে হবে। মুদ্রানীতি এককভাবে কাজ করবে না। তাই এর সঙ্গে আর্থিক নীতি, বাণিজ্যনীতি ইত্যাদি সমন্বয় করে কাজ করতে হবে।
– ফাহমিদা খাতুন, নির্বাহী পরিচালক, সিপিডি