শেয়ার বাজার

এমারাল্ড অয়েলের শত কোটি টাকা ঋণের সত্যতা নিরীক্ষক

এমারাল্ড অয়েলের শত কোটি টাকা ঋণের সত্যতা নিরীক্ষক
পুঁজিবাজার

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি এমারাল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ৯৬ কোটি ৯৭ লাখ টাকার দীর্ঘমেয়াদি ঋণের সত্যতা যাচাই করতে পারেননি কোম্পানিটির নিরীক্ষক। পাশাপাশি কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদনে দেয়া ঋণের পরিমাণ ও ব্যাংকের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের মধ্যে গরমিল পেয়েছেন নিরীক্ষক। কোম্পানিটির ৩০ জুন সমাপ্ত ২০২০ হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে এমন মতামত দিয়েছে এমারাল্ড অয়েলের নিরীক্ষক। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

তথ্যানুসারে, আর্থিক প্রতিবেদনে ২০২০ হিসাব বছর শেষে ১৩২ কোটি ৬২ লাখ টাকার দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেখিয়েছেন এমারাল্ড অয়েল। এ ঋণের বিষয়টি নিশ্চিত হতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কাছে তথ্য চেয়েছিলেন নিরীক্ষক। তবে বেশকিছু ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ঋণের বিষয়ে কোনো তথ্য পাননি নিরীক্ষক। এর মধ্যে বেসিক ব্যাংকের বিভিন্ন হিসাবে ৭২ কোটি ৪৫ লাখ, ইউনাইটেড লিজিংয়ের ১৪ লাখ ৩৫ হাজার ও মাইডাস ফাইন্যান্সের ২৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকা রয়েছে। পাশাপাশি কিছু ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে তথ্য পেয়েছেন নিরীক্ষক। তবে সেখানে ব্যাংক বিবরণীর তথ্য আর কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদনে থাকা তথ্যের মধ্যে গরমিল রয়েছে। আর্থিক প্রতিবেদনে ব্যাংক এশিয়ার ঋণের পরিমাণ ২৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা দেখালেও ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী এর পরিমাণ ২৯ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। একইভাবে প্রাইম ফাইন্যান্সের ঋণের পরিমাণ আর্থিক প্রতিবেদনে ৪২ কোটি ৯৮ লাখ টাকা দেখালেও আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির তথ্যানুসারে এর পরিমাণ ৪৫ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।

এমারাল্ড অয়েলের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ হাসিবুল গণি গালিবের কাছে কোম্পানিটির ১৫৫ কোটি ৬৭ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে বলে আর্থিক প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে। তবে এ অর্থ আদায়ের জন্য কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে সে বিষয়ে নিরীক্ষককে কোনো তথ্য সরবরাহ করেনি কোম্পানিটি।

সর্বশেষ অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, চলতি ২০২২-২৩ হিসাব বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে (জুলাই-মার্চ) কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৫৮ পয়সা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছিল ৩৬ পয়সা। আর চলতি হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ১৭ পয়সা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যেখানে◌শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছিল ১৪ পয়সা। গত ৩১ মার্চ শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট দায় দাঁড়িয়েছে ১০ টাকা ২০ পয়সায়, আগের হিসাব বছরের একই সময় শেষে এ দায় ছিল ১২ টাকা ৮৫ পয়সা। 

এদিকে চলতি হিসাব বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ৫ শতাংশ অন্তর্বর্তীকালীন নগদ লভ্যাংশের সুপারিশ করেছে কোম্পানিটির পর্ষদ। এছাড়া সম্প্রতি টানা পাঁচ বছরেরও বেশি সময় পর মুনাফায় ফেরায় সর্বশেষ ৩০ জুন সমাপ্ত ২০২১-২২ হিসাব বছরে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশের সুপারিশ করেছে পর্ষদ। উল্লিখিত উভয় পরিমাণের লভ্যাংশ কোম্পানির পূর্ববর্তী উদ্যোক্তা ও পরিচালক বাদে সব শেয়ারহোল্ডারকে দেয়া হবে। পূর্ববর্তী উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে কোম্পানির ৩০ দশমিক ৪৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। ঘোষিত লভ্যাংশ ও আলোচ্য হিসাব বছরের অন্যান্য এজেন্ডায় শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন নিতে আগামী ১২ জুলাই বেলা ৩টায় ভার্চুয়াল মাধ্যমে বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) আহ্বান করেছে কোম্পানিটি। এ-সংক্রান্ত রেকর্ড ডেট ২৬ জুন। এ লভ্যাংশ প্রাপ্তিতে যোগ্য শেয়ারহোল্ডার নির্ধারণসংক্রান্ত রেকর্ড ডেট ধরা হয়েছে ২৬ জুন। 

নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২১-২২ হিসাব বছরে এমারাল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজের কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ১ কোটি ২১ লাখ টাকা। আগের হিসাব বছরে নিট লোকসান হয়েছিল ৩ কোটি ৬২ লাখ টাকা। আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ১৭ পয়সা। আগের হিসাব বছরে যেখানে শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছিল ৫৮ পয়সা। গত বছরের ৩০ জুন শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট দায় দাঁড়ায় ১২ টাকা ৮৫ পয়সায়, আগের হিসাব বছর শেষে এ দায় ছিল ২০ টাকা ২৯ পয়সা। 

সম্প্রতি একটি নতুন হুস্ক বয়লারে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করেছে এমারাল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ। গত ১১ মে এ হুস্ক বয়লারে উৎপাদন শুরু করা হয়। নতুন এ হুস্ক বয়লারে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর পর তারা কোনো প্রকার বাধা ছাড়াই দৈনিক ২৪ ঘণ্টা উৎপাদন করতে পারবে বলে জানিয়েছে কোম্পানিটি। এছাড়া সম্প্রতি কোম্পানিটি তাদের শোধন সক্ষমতাও দিনে ৩০ টন থেকে বাড়িয়ে ৭০ টনে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। 

২০১১ সালে স্পন্দন ব্র্যান্ডের রাইস ব্র্যান অয়েল (চালের কুঁড়ার তেল) উৎপাদন শুরুর মাধ্যমে ব্যবসায় নেমেছিল এমারাল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ। তিন বছরের মাথায় ২০১৪ সালে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় কোম্পানিটি। এর এক বছরের মধ্যেই বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির মামলায় জড়িয়ে পড়েন কোম্পানিটির উদ্যোক্তারা। জামিন নিয়ে উদ্যোক্তারা বিদেশ পালিয়ে গেলে ক্ষতির মুখে পড়েন কোম্পানিটির বিনিয়োগকারীরা। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর গত বছরের ৯ জানুয়ারি আবারো বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করেছে এমারাল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ।