শেয়ার বাজার

কারখানার উন্নয়নে ১৫১ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে বিএটিবিসি

কারখানার উন্নয়নে ১৫১ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে বিএটিবিসি
পুঁজিবাজার

খালেদ চৌধুরী : দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি লিমিটেড (বিএটিবিসি) কারখানার উন্নয়নে প্রায় ১৫১ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত সভায় কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ এ অনুমোদন দেয়।

জানা গেছে, কোম্পানিটির সাভার কারখানার স্ট্যান্ডার্ডসহ মোড়ানো উপাদান, পাতা ও উৎপাদিত পণ্য সংরক্ষণের জন্য বন্ডেড গুগাম নির্মাণের জন্য ১০৩ কোটি টাকা, গুদাম ইউটিলিটির বৈদ্যুতিক, আগুন সনাক্তকরণ এবং সুরক্ষা ব্যবস্থা, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ও বায়ু চলাচল ব্যবস্থা, তথ্যপ্রযুক্তি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য ২৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা, কারখানার কর্মচারিদের সুবিধার জন্য মসজিদ, ক্যান্টিন, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ, কারখানার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ইয়ার্ড, ফায়ার স্টেশন ও সরঞ্জাম গুদাম নির্মাণের জন্য ২১ কোটি ৪০ লাখ টাকা এবং রিইনফোর্সড সিমেন্ট কংক্রিট রাস্তা ও ভূগর্ভস্থ ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনায় ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করবে।

এই বিনিয়োগের মাধ্যমে কোম্পানির সক্ষমতা এবং উৎপাদনশীলতার উন্নতি হবে। কোম্পানির নগদ প্রবাহের উপর ভিত্তি করে অভ্যন্তরীন উৎস এবং ব্যাংকের অর্থায়ন থেকে বিনিয়োগে অর্থায়ন করা হবে।

অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন সূত্রানুসারে, বিএটিবিসির গ্রস আয় চলতি ২০২৩ হিসাব বছরের প্রথমার্ধে (জানুয়ারি-জুন) আগের বছরের একই সময়ের  তুলনায় ১৪ শতাংশ বেড়েছে। চলতি হিসাব বছরের প্রথমার্ধে কোম্পানিটির গ্রস আয় হয়েছে ২১ হাজার ২২৯ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। আগের হিসাব বছরের  একই সময়ে এ আয় ছিল ১৮ হাজার ৬৩৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। 

প্রতিবেদন অনুসারে, চলতি হিসাব বছরের প্রথমার্ধে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ৯৪৯ কোটি ৭৬ লাখ টাকা, যেখানে আগের হিসাব  বছরের একই সময়ে নিট মুনাফা ছিল ৯১৩ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। চলতি হিসাব বছরের প্রথমার্ধে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১৭  টাকা ৫৯ পয়সা, যা আগের হিসাব বছরের একই সময়ে ছিল ১৬ টাকা ৯৩ পয়সায়। এ বছরের ৩০ জুন শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য  (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৮৩ টাকা ৮৫ পয়সায়।

এদিকে চলতি হিসাব বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে বিএটিবিসির গ্রস আয় হয়েছে ১১ হাজার ৩১৯ কোটি ৯১ লাখ টাকা, যেখানে আগের হিসাব বছরের একই  সময়ে আয় ছিল ৯ হাজার ৮৭০ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এ সময়ে কোম্পানিটির গ্রস আয় বেড়েছে প্রায় ১৫ শতাংশ। চলতি হিসাব বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ৪৯৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা, যেখানে আগের হিসাব বছরের একই সময়ে নিট মুনাফা ছিল ৪৯৭ কোটি ১ লাখ টাকা। চলতি হিসাব বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ৯ টাকা ১৪ পয়সা, যা আগের হিসাব বছরের একই সময়ে ছিল ৯ টাকা ২০ পয়সায়।

প্রথমার্ধে মুনাফা বাড়ার কারণ হিসেবে বিএটিবিসি জানিয়েছে, সিগারেট বিক্রির পরিমাণ বাড়ার পাশাপাশি তামাক রফতানিতে ভালো আয় হয়েছে। এর প্রভাবে কোম্পানির মুনাফা বেড়েছে।  সর্বশেষ ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত ২০২২ হিসাব বছরে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১০০ শতাংশ চূড়ান্ত নগদ লভ্যাংশের সুপারিশ করেছে বিএটিবিসির পর্ষদ। আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ৩৩ টাকা ১০ পয়সা, আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা ছিল ২৭ টাকা ৭২ পয়সা। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর শেষে কোম্পানিটির এনএভিপিএস দাঁড়ায় ৭৬ টাকা ২৭ পয়সায়, আগের হিসাব বছর শেষে যা ছিল ৬৮ টাকা ১৩ পয়সায়।  ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত ২০২১ হিসাব বছরে বিনিয়োগকারীদের মোট ২৭৫ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে কোম্পানিটি। এর মধ্যে ১৫০ শতাংশ নগদ চূড়ান্ত ও বাকি ১২৫ শতাংশ অন্তর্বর্তীকালীন নগদ লভ্যাংশ। এর আগে ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত হিসাব বছরে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ৫০০ শতাংশ চূড়ান্ত লভ্যাংশ দিয়েছিল বিএটিবিসি। এর মধ্যে ৩০০ শতাংশ নগদ ও ২০০ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ। এর আগে আলোচ্য হিসাব বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের ৩০০ শতাংশ অন্তর্বর্তীকালীন নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল। সব মিলিয়ে ওই হিসাব বছরের জন্য ৮০০ শতাংশ লভ্যাংশ পেয়েছিলেন কোম্পানিটির শেয়ারহোল্ডাররা।

বিএটিবিসি ১৯৭৭ সালে দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ৫৪০ কোটি টাকা। বর্তমানে কোম্পানিটির পরিশোধিত  মূলধনও একই। রিজার্ভে রয়েছে ৩ হাজার ৫৭৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা। কোম্পানির মোট শেয়ার সংখ্যা ৫৪ কোটি। এর মধ্যে ৭২ দশমিক ৯১ শতাংশ উদ্যোক্তা পরিচালক, দশমিক ৬৪ শতাংশ বাংলাদেশ সরকার, ১২ দশমিক ৯৭ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, ৬ দশমিক ১০ শতাংশ বিদেশী বিনিয়োগকারী ও বাকি ৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে।