পুঁজিবাজার বিষয়ে প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য দুইটি। একটি হলো পুঁজিবাজার সম্পর্কে ভুল ধারণা দূর করা, আর অপরটি হলো সচেতনতা বৃদ্ধি করা। সব ধরনের ব্যবসায় ঝুঁকি রয়েছে। কে কতটুকু ঝুঁকি নিবে এটি তার নিজস্ব একটি বিষয়। পুঁজিবাজারের ক্ষেত্রে কম ঝুঁকি নিয়ে বিনিয়োগ করলে দীর্ঘমেয়াদে ভালো মুনাফা পাওয়া যায়। এছাড়াও পুঁজিবাজারে আমাদের সঞ্চয়ের এমন অংশ বিনিয়োগ করতে হবে যা আমাদের আগামী এক বছর কোন প্রয়োজন নেই। কিন্তু আমাদের দেশের বিনিয়োয়াগকারীগণ অনেক ক্ষেত্রে জমিজমা ও গহনা বিক্রি করে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে। সেটি করা যাবে না। আমাদের দেশ ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার ক্ষেত্রে পুঁজিবাজার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
পাবলিক এবং প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ও ছাত্র—ছাত্রীদের জন্য পুঁজিবাজার কেন্দ্রিক একাডেমিক শিক্ষা সচেতনতামূলক ধারাবাহিক কর্মশালার অংশহিসেবে আজ (২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক ও ছাত্র—ছাত্রীদের জন্য সচেতনতামূলক কর্মশালায় প্রধান অতিথি বিএসইসির কমিশনার ড. রুমানা ইসলাম এসব কথা বলেন৷ প্রশিক্ষণ কর্মশালাটি অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোতাহার হোসেন ভবনে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি অব ল’র ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক ড. সীমা জামান—এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন ডিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এটিএম তারিকুজ্জামান, সিপিএ৷ এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোঃ নজরুল ইসলাম৷
সঞ্চয়ের কিছু অংশ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে হবে উল্লেখ করে ড. রুমানা ইসলাম শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, এখনই আপনাদের ভবিষ্যত গড়ার সময়। তাই আগে সঞ্চয় করতে হবে, পরে খরচ করতে হবে। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কি কি ঝুঁকি নিবেন এবং কি পরিমাণ বিনিয়োগ করবেন সে সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা আজকের অনুষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য। একজন সচেতন বিনিয়োগকারী পুঁজিবাজারের সম্পদ। তিনি শুধু নিজের নন, তার দ্বারা সমগ্র বাজারের উপকৃত হয়।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি ডিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এটিএম তারিকুজ্জামান সিপিএ বলেন, আইনি কাঠামো হলো পুঁজিবাজারের মেরুদন্ড। এটির মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়ে থাকে।
বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা প্রদান হলো আমাদের প্রাথমিক দায়িত্ব। যে কোন ধরনের কারসাজি দূর করার জন্য শক্তিশালী আইনি কাঠামো প্রয়োজন। আর এই বিষয়ে আমাদের কাজ চলমান আছে৷
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি আরো বলেন, আপনারা আগামী দিনের ভবিষ্যত। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করার পাশাপাশি পুঁজিবাজারের আইনি কাঠামো ঠিক রাখার ক্ষেত্রে আইন বিভাগের ছাত্রছাত্রীগণ অবদান রাখতে পারে। এক্ষেত্রে আপনাদের গবেষণা ও পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। আমি আশা করি আগামীতে ডিএসই ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ এই বিষয়ে গবেষণামূলক কাজ করবে।
তার আগে অনুষ্ঠানের শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন আইন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোঃ নজরুল ইসলাম৷ স্বাগত বক্তব্যে তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিনিয়োগ শিক্ষা অত্যন্ত জরুরী। সচেতনতার অভাবে বিনিয়োগকারীগণ ক্ষতির স্বীকার হন। এটি দূর করতে হলে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। কমিশনও চাচ্ছে শিক্ষিত বিনিয়োগকারী তৈরি করতে। আর দেশের পুঁজিবাজার ভাল হলে দেশের অর্থনীতিতে এর প্রভাব পড়বে।
পুঁজিবাজার কেন্দ্রিক একাডেমিক শিক্ষা সচেতনতামূলক কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডিএসই’র উপ—মহাব্যবস্থাপক সৈয়দ আল আমিন রহমান৷ মূল প্রবন্ধে তিনি পুঁজিবাজার সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা ও পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি, পুঁজিবাজারের প্রবৃদ্ধি এবং বিনিয়োগ কৌশলসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোকপাত করেন। পুঁজিবাজার বিষয়ক বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন ডিএসই’র সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার ও কোম্পানি সচিব মোহাম্মদ আসাদুর রহমান, এফসিএস।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক ড. সীমা জামান এই ধরণের একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এই ধরনের প্রোগ্রাম শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বৃদ্ধি করবে এবং পুঁজিবাজারের প্রতি তাদের আগ্রহী করবে। আশা করি ডিএসই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের পুঁজিবাজার সম্পর্কে গবেষণা করার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে। এর ফলে শিক্ষার্থীবৃন্দ ও পুঁজিবাজার উভয়ে লাভবান হবে।