বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারী বলেছেন, ‘বাংলাদেশে বীমা কোম্পানির ক্ষেত্রে একটি প্রচলিত অভিযোগ রয়েছে অনেক কোম্পানিই সময়মতো বীমা দাবি পরিশোধ করে না। যদিও এই ধরনের কোম্পানির সংখ্যা খুব বেশি না। কিন্তু তাদের কারণেই এখন বীমা খাতটি একটি চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে। আমরা বীমা দাবি পরিশোধ নিয়ে নয়ছয় করতে দেব না। সেজন্য যেসব কোম্পানি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে সেগুলোকে আমরা পর্যবেক্ষণের আওতায় আনতে শুরু করেছি। মানুষের আমানতের টাকা যেন অপব্যবহার না হয় সে চেষ্টা আমরা করে যাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘যেসব কোম্পানি ঠিকমতো বীমা দাবি পরিশোধ করছে না তারা যখন প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে তখন হানিমুন পিরিয়ড কাটায়। অর্থাৎ কমিশন ও ব্যবস্থাপনা ব্যয় বেশি করা এবং ভালো জায়গায় বিনিয়োগ না করে অর্থ নষ্ট করার মতো কাজগুলো করে। কিন্তু যখন বীমা দাবি পরিশোধ করার সময় আসে তখন তারা সময়মতো বীমা দাবি পরিশোধ করতে পারে না। তাদের এ সময়মতো দাবি পরিশোধের ব্যর্থতায় বীমা খাত নিয়ে মার্কেটে একটা নেতিবাচক খবর প্রচার হয়ে আছে। মূলত এ ধরনের কোম্পানির সংখ্যা চার-পাঁচ। কিন্তু তাদের কারণেই এখন বীমা খাত একটি চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে।’
ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের (আইডিইবি) মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি মিলনায়তনে গতকাল ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সে কোম্পানি আয়োজিত ক্ষুদ্র বীমা ডিভিশন গণগ্রামীণ বীমার নারী কর্মী সম্মেলন ২০২৩-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। কোম্পানির ভাইস চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো. জোনায়েদ শফিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পরিচালকদ্বয় আদিবা রহমান ও সুরাইয়া রহমান, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আনোয়ারুল হক (চলতি দায়িত্ব) এবং উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ও কোম্পানি সচিব উত্তম কুমার সাধু।
আইডিআরএ চেয়ারম্যান বলেন, ‘বাংলাদেশের বীমা খাত অনেকে পিছিয়ে রয়েছে। অর্থনীতিতে বীমা খাতের অবদান পরিসংখ্যান করলেও দেখা যাবে এর অবদান খুবই নগণ্য। তবে এ খাতে অনেক সম্ভাবনা আছে। আমাদের ১৭ কোটি মানুষের এ দেশের এক কোটিরও কমসংখ্যক মানুষ বীমা সুবিধার আওতায় রয়েছে। ২০২২ সালের তথ্যানুসারে দেশে মাত্র ৮৮ লাখ মানুষ বীমা সুবিধার আওতায় রয়েছে। তাই বীমা খাতের পরিধি বাড়ানোর বড় একটি সম্ভাবনা এখানে রয়ে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে বীমা খাতের পরিধি বাড়াতে যেসব ক্ষেত্রে কাজ করা যেতে পারে তার মধ্যে অন্যতম ক্ষুদ্র বীমা, যেখানে ডেল্টা লাইফ এরই মধ্যে কাজ করছে। তাদের এ ক্ষুদ্র বীমা মূলত নারীকেন্দ্রিক। আমাদের দেশের উন্নয়নে একটি ভিন্নমাত্রা যোগ পেয়েছে যখন থেকে সরকার নারীদের উন্নয়নযাত্রায় শামিল করেছে। পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাগুলো যখন নরীদের নিয়ে কাজ শুরু করেছে তখন দেশের উন্নয়নও সাসটেইনেবল পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। তবে বীমার ক্ষেত্রে আমরা নারীদের এখনো সম্পৃক্ত করতে পারিনি। ডেল্টা লাইফের মতো অন্যান্য বীমা কোম্পানির ক্ষেত্রটি নিয়ে কাজ করার অপারসম্ভাবনা রয়েছে।’
মোহাম্মদ জয়নুল বারী বলেন, ‘আইডিআরএ এরই মধ্যে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে কাজ করা নিয়ন্ত্রক সংস্থা মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির সঙ্গে পার্টনারশিপ করার উদ্যোগ নিয়েছে, যাতে তাদের যে বিপুলসংখ্যক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা রয়েছে তাদেরবীমা সুবিধার আওতায় আনতে পারি। আমরা ব্যাংক-ইস্যুরেন্স পদ্ধতি চালু করতে কাজ করছি। বাংলাদেশে বর্তমানে ব্যাংক আমানতকারী বা ব্যাংক গ্রাহক রয়েছে প্রায় সাড়ে ছয় কোটি। এদের যদি আমরা বীমা সুবিধার আওতায় আনতে পারি তাহলে বীমা খাত আর পিছিয়ে থাকবে না। এছাড়া আমরা ইন্স্যুরেন্স টেকনোলজি নিয়ে কাজ করা ইন্স্যুটেক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গেও একটি পার্টনারশিপ করার উদ্যোগ নিয়েছি। যাতে ডিজিটাল টেকনোলজি ব্যবহার করে গ্রহকদের কাছে খুব সহজেই বীমা সুবিধা পৌঁছে দেয়া যায়। আমরা বীমার উন্নয়ন ও প্রসার ঘটানোর লক্ষ্যে এ ধরনের অনেক উদ্যোগ নিয়েছি।’
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে আইডিআরএর প্রশাসন বিভাগের সদস্য মইনুল ইসলাম, আইন বিভাগের সদস্য মো. দলিল উদ্দিন, লাইফ বিভাগের সদস্য কামরুল হাসান ও ঢাকা বিশ্বাবিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের প্রফেসর ড. সুতপা ভট্টাচার্য উপস্থিত ছিলেন।