জেন্ডার বাজেট নারীর জন্য আলাদা কোনো বাজেট নয়; বরং এটি একটি বিশেষ পদ্ধতি, যার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় হিসাবনিকাশের সাহায্যে জাতীয় বাজেটের জেন্ডার সংবেদনশীলতা বিশ্লেষণ করা যায়। নারীর ক্ষমতায়ন ও বাজেটে জেন্ডার বৈষম্য দূর করতে কেমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে– এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা মতামত দিয়েছেন।
গত বছরের তুলনায় জেন্ডার বাজেটে বরাদ্দ কিছুই বাড়েনি। এটি একদমই অপ্রতুল। বাজেটের হিসাবটাই ঠিক নেই। এর মধ্যে কোনো স্বচ্ছতা নেই। মন্ত্রণালয় হিসেবে দেখা যায়, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে বাজেটের মাত্র ১ শতাংশের মতো বরাদ্দ রয়েছে। সেখানে বিভিন্ন ধরনের দক্ষতা বৃদ্ধি কার্যক্রম চালানো হয়। তবে এর ফলে প্রকৃতপক্ষে বেকারত্ব কতটা কাটল, সেই হিসাব নেই। অন্যান্য মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দে যে হিসাব নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, তাকে দেখা হয় নারী উন্নয়নে বরাদ্দ হিসেবে।
বাজেটে বরাদ্দ দেওয়ার পর তা কীভাবে খরচ হচ্ছে, সেই হিসাব প্রতিবেদনে দেওয়া হয় না। আবার আরেক বিষয় হলো খাত বরাদ্দের বিষয়। রাস্তাঘাট নির্মাণ সবার জন্যই সমান। এটিকে নারীর উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ বলার সুযোগ নেই। যদি জেন্ডার বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, তাহলে একই বরাদ্দকে দুইবার গোনা হবে।
শ্রমবাজারে মেয়েদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে তাদের অংশগ্রহণ বেশি। এ খাতে আয় কম, কাজের নিরাপত্তা কম। যে কারণে কোনো সংকট দেখা দিলেই তাদের চাকরি চলে যায়। করোনাকালে আমরা যেমনটা দেখেছি, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে সবার আগে শ্রমিকদের ছাঁটাই শুরু হয়। আমরা ভালো বেতনের প্রাতিষ্ঠানিক শ্রমবাজারে নারীদের অংশগ্রহণ চাইছি। সে জন্য যে পরিমাণ শিক্ষা ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে বিনিয়োগ করা দরকার, তা কিন্তু নেই। গতানুগতিকভাবে বাজেটে বরাদ্দ দিয়ে যাচ্ছে। বাস্তবে তা নারীর প্রকৃত উন্নয়নে কতটা প্রভাব রাখছে, সেই হিসাব করা হয়নি। যে গতিতে নারীকে শ্রমবাজারে সম্পৃক্ত করার কথা ছিল, তা খুবই ধীরগতির।
নারীর উন্নয়নের জন্য আমাদের তাদের প্রাতিষ্ঠানিক খাতে সম্পৃক্ত করতে হবে। এ জন্য শিক্ষা খাত ও দক্ষতা বাড়ানোর পদক্ষেপ নিতে হবে। বিনিয়োগ করতে হবে। যে মেয়েরা চাকরিতে আসতে পারছে না, তাদের জন্য আত্মনির্ভরশীল হওয়ার পথে আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতা দিতে হবে। শ্রমবাজারে নারীদের টেনে আনার জন্য, তাদের ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্টের জন্য সরকারকে ডে-কেয়ার সেন্টার, স্কুল-কলেজ, মেয়েদের জন্য ট্রান্সপোর্ট– এই সব ক্ষেত্রেই বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। তা না হলে মেয়েদের শ্রমবাজারে আনা যাবে না।
আমাদের রক্ষণশীল মানসিকতায় সামাজিক প্রতিবন্ধকতা এখনও আছে। অচিরেই এ থেকে আমরা মুক্তি পাচ্ছি না। এটি সব পর্যায়েই আছে। নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে শুরু করে ঘরে-বাইরে, সমাজের প্রতিটি পর্যায়ে সব জায়গায় প্রকটভাবে এ রক্ষণশীলতা রয়ে গেছে।
নারীর সচেতনতা বাড়লেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে অসচেতনতা দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার অভাবই দায়ী। নারীদের সচেতন করা, তাদের শিক্ষা দেওয়া সরকারের কাজ। তাদের জন্য যদি সুযোগ সৃষ্টি না করা হয়, অনুকূল পরিবেশ না করে দেওয়া হয়, তাহলে নারীরা শ্রমবাজারে আসবে না।
ফাহমিদা খাতুন
নির্বাহী পরিচালক, সিপিডি